পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৯
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তদশ প্রবাহ

শুকাইয়া গিয়াছে। তুমিও নিশ্চয় জানিও, এজিদ বর্ত্তমান থাকিতে এ রাজ্যের সৌভাগ্যশশীর অল্প পরিমাণ অংশও রাহুর গ্রাসে পতিত হইবে না। আমি তোমাকে এইক্ষণে কয়েকটি কথা জিজ্ঞাসা করিব, তুমি তাহারই উত্তর দাও। জয়নাল আবেদীন, হাসান-পরিবার ইহারা কি এখনও জীবিত থাকিবে। মোহাম্মদ হানিফা যদি সীমারের প্রাণবিনাশ করিয়া থাকে, তবে নিশ্চয়ই আমি জয়নালের শিরশ্ছেদ স্বহস্তে করিব।”

 “মহারাজ! এ সময়ে জয়নাল আবেদীনের প্রাণ বিনাশ করিলে আর নিস্তার নাই। এ জ্বলন্ত অগ্নি এখনও নির্ব্বাণের উপায় আছে—এখনও রক্ষার উপায় আছে—এখনও সন্ধির আশা আছে। কিন্তু জয়নালের কোন অনিষ্ট ঘটাইলে ধন, জন, রাজ্য, প্রাণ সমূলে বিনাশের সুপ্রশস্ত পথ পরিস্কার করিয়া দেওয়া হইবে। দামেস্ক-রাজ্যের আশা, প্রাণের আশা পরিত্যাগ করিয়া জয়নাল আবেদীনকে যাহা ইচ্ছা হয়, করিতে পারেন। এখনও পরাজয় স্বীকার পূর্ব্বক জয়নালকে ছাড়িয়া দিলে দামেস্কনগর রক্ষার আশা করিলেও করা যাইতে পারে। দেখুন, হাসানের বধসাধন হইলে বৃদ্ধ মন্ত্রী হামান প্রকাশ্য সভায় যখন সারগর্ভ রাজনৈতিক উপদেশচ্ছলে নিজ মত প্রকাশ করিয়াছিলেন, সে সময় আমি তাঁহার মতেয় পোষকতা করি নাই। যদি জানিতাম যে, হোসেন ব্যতীত মোহাম্মদ হানিফা নামে প্রবল পরাক্রান্ত আরও এক বীর আছে, তাহা হইলে বৃদ্ধ সচিবের কথা কখনও অবহেলা করিতাম না। আপনার মত প্রবল করিয়া কোনকালেই অগ্রসর হইতাম না; যদি হইতাম, তবে অগ্রে হানিফার বধসাধন না করিয়া হোসেনের বিরুদ্ধে কিছুতেই অস্ত্র ধরিতাম না। ভ্রম লোকের সর্ব্বনাশের মূল। ভ্রমই মনুষ্যের অমঙ্গলের কারণ!

 “মারওয়ান! তোমার এ দুর্ব্বুদ্ধি আজ কেন হইল? আমি পরাজয় স্বীকার করিয়া সন্ধি করিব? প্রাণের ভয়ে হানিফার সহিত সন্ধি করিব? জয়নালকে, হাসান-পরিজনকে ছাড়িয়া দিব? জয়নাবকে ছাড়িয়া দিব? ধিক্ তোমার কথায়। আর শত ধিক্ এজিদের প্রাণে! মারওয়ান! বল ত, এ মহাসংগ্রামের কারণ কি? এ ঘটনার মূল কি? তুমি কি .