পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৪০

সকলি বিস্মৃত হইয়াছ? মনে হয়, তুমিই বলিয়াছিলে, স্ত্রীজাতি বাহ্যিক সুখপ্রিয়? কৈ এত দিনেও ত তোমার কথার সত্যতা-প্রমাণ বা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাইলাম না। জগতে সুখী হইতে কে না ইচ্ছা করে? —এও তোমারই কথা। কৈ, জয়নাব বন্দীগৃহে মহাক্লেশে থাকিয়াও ত সুখী হইতে ইচ্ছা করে না, পাটরাণী হইতেও চাহে না? মারওয়ান। তোমাদের পদে পদে ভ্রম। আমি ত উন্মাদ। গত বিষয়ের আলোচনা বৃথা। আমার আজ্ঞা এই যে, তোমাকে এখনই অলীদের সাহায্যে এবং সীমারের উদ্ধারে যাইতে হইবে।”

 “আমি যাইতে প্রস্তুত। অলীদের সাহায্য ব্যতীত এ সময়ে হানিফাকে আক্রমণ করিতে আমি পারিব না।”

 “সুযোগ পাইলে আক্রমণ করিবে না?”

 “সুযোগ পাইলে মারওয়ান ছাড়িয়া দিবে, তাহা মনে করিবেন না। তবে বলিতেছি যে, অগ্রে অলীদকে রক্ষা করাই আমার প্রধান কার্য্য। সীমারের দেখা পাইলে, কিম্বা সে জীবিত থাকিলে অবশ্যই তাহার উদ্ধারের চেষ্টা করিব।”

 “চেষ্টা করিবে,—এ কি কথা? উদ্ধার করিতেই হইবে।”

 “মহারাজ। যে কঠিন সময় উপস্থিত হইয়াছে, নিশ্চিতরূপে আর কিছুই বলিতে পারি না। সময় মন্দ হইলে চতুর্দ্দিক হইতে বিপদ চাপিয়া পড়ে। এখন ভবিষ্যৎ ভাবিয়া কার্য্য না করিলে পরিণাম রক্ষা করা যাইবে না। একা মোহাম্মদ হানিফা আপনার শত্রু নহে। নানা দেশের, নানা রাজ্যের ভূপতি ও বীরপুরুষগণ আপনার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়াছে। বলিতে গেলে, মোহাম্মদভক্ত মাত্রেই আপনার প্রাণ লইতে দুই হস্ত বিস্তার করিয়াছে।”

 “আমি কি এতই হীনবল হইয়া পড়িয়াছি যে, তোমার বর্ণিত রাজগণের সহিত যুদ্ধ করিয়া পরাস্ত হইব?”

 “মহারাজ! জয়-পরাজয় ভবিষ্যতের গর্ভে।”

 “তবে কি হানিফার খণ্ডিত মস্তক আমি দেখিব না?”