পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৪২

নীলিমা-রেখা কে অঙ্কিত করিল? হায়! হায়!! হোসেন-শোকের অন্ত নাই। এ বিষাদ সিন্ধুর শেষ নাই। বিমানে সুর্য্যদেবের অধিকার, রজনী দেবীর তারকামালার অধিকার থাকা পর্য্যন্ত মোহাম্মদীয়গণের অন্তরাকাশ হইতে এ মহাবিষাদ-নীলিম-রেখা কখনই সরিবে না!

 মোহাম্মদ হানিফা নিদারুণ শোকে, মর্ম্মভেদী বেশে নগরে প্রবেশ করিলেন। নগরবাসিগণ হোসেনের নাম করিয়া দিতে দিতে মোহাম্মদ হানিফার পদপ্রান্তে লুণ্ঠিত হইতে লাগিল। হায়! পুণ্যভূমি মদিনায় আজ অন্ধকার। মোহাম্মদ হানিফার অন্তরে শোক-সিন্ধুর তরঙ্গ উঠিয়াছে—প্রবাহ ছুটিয়াছে। নূরনবী হজরত মোহাম্মদের রওজার চতুষ্পার্শ্বে যাইয়া সকলে একত্রে হাসান, কাসেম প্রভৃতির শোকে অধীর হইয়া কাঁদিতে লাগিলেন। ক্রমেই ক্রন্দনের আবেগ বৃদ্ধি, আরও বৃদ্ধি! কিন্তু বৃদ্ধি। হইতে হইতেই হ্রাস, ক্রমেই মন্দীভূত, ক্রমেই নীরব, ক্রমেই হা-হুতাশ, ক্রমেই দুই একটি কথা শুনা যাইতে লাগিল। মোহাম্মদ হানিফা সকলের কথাই শুনিতে লাগিলেন, অনেককে আশ্বস্ত করিলেন, অনেককে সাহস দিলেন, কাহাকেও বা সস্নেহ মিষ্ট সম্ভাষণে আদর করিলেন। ক্রমে নাগরিকদলকে বিদায় দিয়া সঙ্গীয় রাজগণ, সৈন্যগণ, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবগণ কে কোথায় আছেন, কি করিতেছেন, তাহার তত্ত্বাবধান করিয়া আহার বিহার বিশ্রামের শৃঙ্খলায় মনোনিবেশ করিলেন।

 মদিনার প্রধান প্রধান ও মাননীয় সম্ভ্রান্ত মহোদয়গণ আসিয়া বলিতে লাগিলেন, “যাহা হইবার হইয়াছে, এক্ষণে কি করা যায়?”

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “মদিনার সিংহাসনে জয়নাল আবেদীনকে বসাইতে না পারিলে আমার মনে শান্তি হইবে না। দুঃখ করিবার সময় অনেক রহিয়াছে। মদিনার যেরূপ বিশ্রী অবস্থা দেখিতেছি, ইহাতে আমার মন অত্যন্ত চঞ্চল ও ব্যথিত হইয়া মহা কষ্টভোগ করিতেছে। জয়নাল আবেদীন নিশ্চয়ই জীবিত আছে। জয়নাল মদিনা ও দামেস্ক উভয় রাজ্যই করতলস্থ করিয়া একচ্ছত্ররূপে রাজত্ব করিবে—ইহা নিশ্চিত, অব্যর্থ। যাঁহার ভবিষ্যদ্বাণী এতদূর সফল হইল, তাঁহার বাক্যের শেষ