পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৪৪

 ওদিকে মারওয়ানের মদিনাভিমুখে আগমন এবং অলীদের দামেস্কে গমন, পথিমধ্যে উভয় সেনাপতির সাক্ষাৎ—উভয় দলের মিলন! অলীদের সঙ্গে অল্প মাত্র সৈন্য; তাহার অধিকাংশ আহত, কতক জরাগ্রস্ত, বা অর্দ্ধমৃত, কতক অসুস্থ। তাহাদের মুখ মলিন, বসন মলিন। তাহাদের পৃষ্ঠদেশে তুণীর ঝুলিতেছে, তীর নাই—কোষ রহিয়াছে, তরবারি নাই। বর্শার ফলক কোথায় উড়িয়া গিয়াছে, কেবল দণ্ড বর্ত্তমান। পতাকাছিন্ন, দণ্ড ভগ্ন—সাহস উৎসাহের নাম মাত্র যেন নাই। তাহারা তাড়িত,—ভয়ে চকিত, তাহাদের সর্ব্বদাই পশ্চাদৃষ্টি। মনঃসংযোগে অশ্ব-পদ-শব্দ শুনিতে তাহাদের কর্ণ স্থির। সৈন্যগণের অবস্থা দেখিলেই অনুমান হয় যে, প্রবল ঝঞ্ঝাবাতেই ইহাদের সর্ব্বস্ব উড়িয়া গিয়াছে। আহারাভাবে তাহারা মহা-ক্লান্ত।

 মন্ত্রীপ্রবর মারওয়ান অলীদের অবস্থা দেখিয়া আর অগ্রসর হইতে সাহসী হইল, না, ঐ সংযোগস্থলেই উভয় দল একত্রিত হইয়া গমনে ক্ষান্ত হইল। পরস্পর কথাবার্ত্তা আরম্ভ হইলে মারওয়ান বলিল, “এইক্ষণে মদিনা আক্রমণ, কি হানিফার সহিত যুদ্ধ করা উচিত নহে; আমাদের বলবিক্রমের সহিত তুলনা করিলে হানিফার সৈন্যদল সহস্রাংশে শ্রেষ্ঠ; এ অবস্থায় আত্মরক্ষাই সর্ব্বতোভাবে শ্রেয়।”

 অলীদ বলিল, “আত্মরক্ষা ভিন্ন আর উপায় কি? সীমারের দুর্দ্দশা দেখিয়া আমার প্রাণ কাঁপিয়া উঠিয়াছে।”

 “সীমারের দুর্দ্দশা কি?”

 অণীদ সীমারের শাস্তির বৃত্তান্ত আদি-অন্ত বিবৃত করিল।

 মারওয়ান বলিল, “সীমারের যে, দুর্দ্দশা ঘটিবে—তাহা আমি অগ্রেই ভাবিয়া স্থির করিয়াছিলাম।”

 অলাদ বলিল, “ভ্রাতঃ। হানিফার বল বিক্রম দেখিয়া স্বদেশের আশা, জীবনের আশা, ধন-জন-পরিজন-আশা হইতে একেবারে নিরাশ হই নাই বটে, কিন্তু সন্দেহ অনেক ঘটিয়াছে।”

 “ওরে ভাই! আমি ত সীমার-উদ্ধার ও তোমার সাহায্য,—এই দুই কার্য্যের ভার গ্রহণ করিয়া আসিয়াছি। সীমারের উদ্ধার ত এ জীবনে