পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৭
উদ্ধার পর্ব্ব—ঊনবিংশ প্রবাহ

না; অন্য অন্য আলাপে নগরবাসীদিগকে সন্তুষ্ট করিলেন। সে দিন কাটিয়া গেল। নিশাগমনে ঈশ্বর আরাধনা করিয়া সকলেই স্ব স্ব স্থানে নিদ্রাদেবীর নিয়মিত অর্চ্চনায় আশ্রয় গ্রহণ করিলেন।

 মোহাম্মদ হানিফা শয়ন করিয়া আছেন, ঘোর নিদ্রায় অভিভূত। স্বপ্ন দেখিতেছেন—যেন হজরত নূরনবী মোহাম্মদ তাঁহার শিয়রে দণ্ডায়মান হইয়া বলিতেছেন, “মোহাম্মদ হানিফা! জাগ্রত হইয়া আলস্য পরিহার কর, এ সময় তোমার বিশ্রামের সময় নহে। তোমার পরিজন দামেস্কে বন্দী, তুমি মদিনায় বিশ্রামসুখে বিহ্বল? দামেস্কে ঈশ্বরের নাম করিয়া এখনই যাত্রা কর, জয়নাল-উদ্ধার হইবেই,—কোন চিন্তা নাই। ঈশ্বর তোমার সহায়।” মোহাম্মদ হানিফা যেন স্বপ্নযোগে প্রভুর পদধূলি মস্তকে গ্রহণ করিলেন। তাঁহার নিদ্রা ভাঙ্গিয়া গেল—অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। ভয়ে ভীত হইয়া তিনি গাজী রহ্‌মানকে ডাকিয়া, মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী এবং আর আর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুগণকে জাগাইয়া স্বপ্ন-বিবরণ বলিলেন।

 গাজী রহ্‌মানকে তিনি বলিলেন, “প্রভুর আদেশ হইয়াছে, আর বিলম্ব নাই, এখনই যাত্রা,—এই-ই শুভ সময়। হাঁ, এখন বুঝিলাম—‘সেই সময়ের’ অর্থ এখন বুঝিলাম। আমরা কেবল রাজনীতি, সমরনীতি, বিধিব্যবস্থা, যুক্তি ও কারণের উপর নির্ভর করিয়াই কার্য্য করি। ভ্রম হইলে ঈশ্বরের দোহাই দিয়া রক্ষা পাই। কিন্তু মদিনাবাসীরা আমাদের অপেক্ষা সহস্রাংশে শ্রেষ্ঠ। আমি সেই সময়ের অর্থ বুঝিতে পারি নাই। ধন্য মদিনা। ধন্য তোমার পবিত্রতা! ধন্য তোমায় একাগ্রতা।”

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “গাজী রহ্‌মান! আমরা বাহ্যিক ব্যবহার, বাহ্যিক কারণ দেখিয়াই কার্য্যানুষ্ঠান করি; কিন্তু মদিনাবাসীদিগের প্রতি কার্য্য ঈশ্বরে নির্ভর করে এবং নূরনবী মোহাম্মদের প্রতি তাঁহাদের অটল ভক্তি; তাহার প্রমাণ প্রাচীন কাহিনী। প্রভুর জন্মস্থান মক্কা নগরের অধিবাসীরা প্রভুর কথায় বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করা দূরে থাকুক, বরং তাহার জীবনের বৈরী হইয়াছিল। এই মদিনাবাসীরাই তাঁহাকে সম্মানের সহিত গ্রহণ করেন এবং ঈশ্বরের সত্যধর্ম্ম এই