লাগিলেন। আবদুল জব্বারের মস্তকে যেন সহস্র অশনির সহিত আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। তাঁহার আকাশকুসুমের আমূল চিন্তাবৃক্ষটি এককালে নির্ম্মূল হইয়া গেল। প্রতিনিধির বাক্য-বজ্রাঘাতে সুখ-স্বপ্ন-তরু দগ্ধীভূত হইল। পরিচারকগণ রাজকুমারীর অঙ্গীকৃত অর্থ আবদুল জব্বারের সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিল। আবদুল জব্বার তাহা গ্রহণ করিলেন না। কাহাকেও কিছু না বলিয়া সভাভঙ্গের গোলযোগে রাজভবন হইতে বহির্গত হইয়া রাজদত্ত পরিচ্ছদ পরিত্যাগ করিলেন এবং ফকিরের বেশ ধারণ করিয়া বনে বনে নগরে নগরে বেড়াইতে লাগিলেন; গৃহে প্রতিগমন করিলেন না।
কথা গোপন থাকিবার নহে। আবদুল জব্বারের সঙ্গীরা ফিরিয়া যাইবার পূর্ব্বেই তাঁহার আবাসপল্লীতে উক্ত ঘটনা রাষ্ট্র হইয়াছিল। মূল কথাগুলি নানা অলঙ্কারে বর্দ্ধিত কলেবর হইয়া বাতাসের অগ্রে অগ্রে ছুটিয়া জয়নাবকে এবং প্রতিবেশিগণকে মহা দুঃখিত করিয়াছিল। তখন পর্য্যন্তও নিশ্চিত সংবাদ কেহ পান নাই। অনেকেই বিশ্বাস করেন নাই। সেই অনেকের মধ্যে জয়নাব একজন। আবদুল জব্বারের সঙ্গিগণ বাটীতে ফিরিয়া আসিলে জয়নাবের সন্দেহ দূর হইল। তাহার আশাতরী বিষাদ-সিন্ধুতে ডুবিয়া গেল। জয়নাব কাহাকেও কিছু বলিলেন না; কেবল তাঁহার পিতাকে সংবাদ দিয়া অতি মলিনবেশে দুঃখিত হৃদয়ে পিত্রালয়ে গমন করিলেন।
চতুর্থ প্রবাহ
পথিক ঊর্দ্ধশ্বাসে চলিতেছেন,—বিরাম নাই, মূহূর্ত্তকালের জন্য বিশ্রাম নাই। এজিদ গোপনে বলিয়া দিয়াছেন, যখন নিতান্ত ক্লান্ত হইবে, চলৎশক্তি রহিত হইবে, ক্ষুৎ-পিপাসায় কাতর হইয়া পড়িবে, সেই সময়ে একটু বিশ্রাম করিও। কিন্তু বিশ্রামহেতু যে সময়টুকু অপব্যয় হইবে, বিশ্রামের পর দ্বিগুণ বেগে চলিয়া তাহা পরিপূর্ণ করিবে। পথিক এজিদ-আজ্ঞা লুঙ্ঘন না করিয়া অবিশ্রান্ত যাইতেছেন। একে মরুভূমি, তাহাতে প্রচণ্ড আতপতাপ, বিশেষ ছায়াশূন্য প্রান্তর,—বিশ্রাম করিবার স্থান অতি বিরল। দেশীয়