পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৫২

 “বাদশাহ্-নামদার! সকলি পত্রে লেখা আছে।”

 (মহাক্রোধে) “পত্র শেষে পড়িব। ওত্‌বে অলীদ উপস্থিত থাকিতে সীমার-উদ্ধার হইল না? সে কি কথা?

 “তিনি উপস্থিত ছিলেন, এখনও জীবিতই আছেন, কিন্তু মরিয়া বাঁচিয়া আছেন।”

 “হানিফা মদিনা যাইতে সাহসী হইয়াছে?”

 “বাদশাহ্-নামদার। সে সকল কথা মুখে বলিতে আমার শরীর রোমাঞ্চিত হইতেছে। পত্রেই বিশেষ লেখা আছে।”

 “না—আমি পত্র খুলিব না। তোমার মুখে সকল কথা শুনিব, বল।”

 “বাদশাহ্-নামদার! অলীদ পরাস্ত হইয়াছেন।”

 “কে পরাস্ত করিল?”

 “মোহাম্মদ হানিফা।”

 “কি প্রকারে?”

 “অলীদ মদিনা-প্রবেশ-পথ বন্ধ করিয়াছিলেন। তাহাতে হানিফার সহিত যুদ্ধ হয়, ক্রমে কয়েক দিন যুদ্ধ-দিবারাত্র যুদ্ধ! শেষ দিন মস্‌হাব কাক্কা বিস্তর অশ্বারোহী সৈন্যসহ উপস্থিত হইলে, দামেস্ক-সৈন্য আর টিঁকিতে পারিল না—রক্তমাখা দেহ লইয়া দলে দলে ভূতলে গড়াইতে লাগিল; অশ্বদাপটেই কত শত জনের প্রাণবিয়োগ হইল। বাদশাহ্-নামদার! এমন যুদ্ধ কখনও দেখি নাই। এমন বীরও কখনও দেখি নাই। অস্ত্রের আঘাত, অশ্বের পদাঘাত সমানেই চলিল। দেখিতে দেখিতে দামেস্ক-সৈন্য তৃণবৎ উড়িয়া গিয়া কোথায় পলাইল, তাহার অন্ত রহিল না। বিপক্ষের সেনাপতি মহাশয়ের শিবির লুটপাট করিয়া মদিনাভিমুখে ‘জয় জয়’ রব করিতে করিতে চলিয়া গেল।”

 “অলীদ কিছুই করিল না?”

 “তিনি আর কি করিবেন? মস্‌হাব কাক্কা তাঁহার অশ্বকে লাথি মারিয়া ফেলিয়া দিল। তাঁহাকে শূন্যে উঠাইয়া এক আছাড়েই তাঁহার প্রাণ বাহির করিবে—মস্‌হব কাক্কার এইরূপ কথা; কেবল হানিফার অনুরোধে অলীদের