পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৫
উদ্ধার পর্ব্ব—বিংশ প্রবাহ

অনেক ভিন্ন। পূর্ব্বে মন্ত্রণায় বিচার হইত,—তর্কে মীমাংসা হইত।—ভ্রম কাহার না আছে? ভূপতির ভ্রম হইলে তিনি ভ্রম স্বীকার করিতেন। অমাত্যগণের ভ্রম হইলে তাঁহারাও ভ্রম স্বীকার করিতেন। এখন সে কাল নাই, সে মন্ত্রণাও নাই, সে মীমাংসাও নাই,—ন্যায্য হউক, অন্যায্য হউক, ন্যায় হউক, অন্যায় হউক, স্ব স্ব মত প্রবল করিতে সকলেই ব্যস্ত, সকলেই চেষ্টিত। বিশেষতঃ অপরিপক্ক মস্তিষ্কের নিকট আমরা এক প্রকার বাতুল বলিয়া সাব্যস্ত হইয়াছি। মহারাজ! মনে হয়, হাসানের বিষপানের পর এই নির্ব্বোধ বৃদ্ধ কি বলিয়াছিল? সেই প্রকাশ্য দরবারে কে কি বলিয়াছিল? নবীন বয়সে নূতন সিংহাসনে বসিয়া কৃষ্ণকেশ বিকৃত অপরিপক্ক মস্তিষ্কের মন্ত্রণাতেই আপনি মত দিলেন। সেই অদূরদর্শী, ভবিষ্যৎ-জ্ঞানশূন্য মারওয়ানই বেশী আদর পাইল। মনের বিরাগে সারগর্ভ উপদেশ বিবেচনা না করিয়া সেই সম্পূর্ণ ভ্রমময় অসার বাক্যেরই আপনি পোষকতা করিলেন। এ পাগল তুচ্ছ হইল। বালকেই বালকের বুদ্ধির প্রশংসা করে, যুবাই যুবার নিকট আদর পায়। আমি বয়সে মহাপ্রাচীন হইলেও আপনি রাজা,—মাথার মণি। এ যুদ্ধ সম্বন্ধে সেই একদিন আমার মত প্রকাশ করিয়াছি, আর আজ রাজ্যের দুরবস্থা —ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা দেখিয়া বলিতে বাধ্য হইতেছি। মহারাজ! বৃদ্ধ মন্ত্রীর অপরাধ মানা হউক। একবার ভাবিয়া দেখুন দেখি, যে কারণে যুদ্ধ, যে কারণে দামেস্ক-রাজ্যের এই শোচনীয় দশা, সে কারণের পরীক্ষা ত অগ্রেই হইয়াছিল! যে আমার নয়, আমি তাহার কেন হইব—একথা সকলের বুঝা উচিত। এক জিনিষের দুই গ্রাহক হইলে পরস্পরের মধ্যে শত্রুভাব, হিংসাভাব স্বভাবতঃই যে উপস্থিত হয়, ইহা আমি অস্বীকার করি না। যাহার হৃদয় আছে, মনুষত্ব আছে, সে সেদিকে ভ্রমেও লক্ষ্য করে না, তাহাও জানি। যাহার অসহ্য হয়, সে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হইয়া যাহা ইচ্ছা তাহাই করিয়া বসে—করিতেও পারে। কারণ, যৌবনকাল বড়ই ভীষণ কাল। সে কালের অনেক দোষ মার্জ্জনীয়। তবে যে হৃদয়ে শক্তি আছে, যে মনে বল আছে, তাহার কথা স্বতন্ত্র। শত্রুপরিবারের সহিত শত্রুতা কি? তাহার সন্তান-সন্ততি পরিজনের সহিত হিংসা কি? মহারাজ! হোসেনের শির