পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৭
উদ্ধার পর্ব্ব—বিংশ প্রবাহ

চির-হিংসাপূর্ণ হৃদয়কে স্ববশে আনিতে পারিলেন না। দুর্নিবার ক্রোধ দ্বাদশ প্রকার হিংসার জীবমুর্ত্তি ধারণ করিয়া তাঁহার হৃদয় অধিকার করিয়া বসিল। লোহিত লোচনে ক্রোধযুক্ত স্বরে তিনি বলিলেন, “তুমি মাবিয়ার মন্ত্রী—আমার সহিত তোমার কোন মতেই ঐক্য নাই—হইবেও না— —হইতে পারেও না। তুমি অনেক সময় আমাকে মনোকষ্ট দিয়াছ! আমি তোমার মুখ দেখিতেও ইচ্ছা করি না। তুমি দূর হও, আমার সম্মুখ হইতে দূর হও! কে আছ, এই বৃদ্ধ পাগলকে রাজপুরী হইতে বাহির করিয়া কারাগারে আবদ্ধ কর। যাহার কোন জ্ঞান নাই, তাহার উপযুক্ত স্থান মশান বা শ্মশান। যাও বুদ্ধিমান, যাও— তোমার পরিপক্ক মস্তক লইয়া জীবনের অবশিষ্ট অংশ কারাগারে বাস কর। রাজপ্রাসাদে তোমার আর স্থান নাই।”

 আজ্ঞামাত্র প্রহরিগণ বৃদ্ধ সচিবকে লইয়া চলিল। মন্ত্রিবর যাইবার সময়ও বলিলেন, “মহারাজ! রাজ-আজ্ঞা শিরোধার্য্য। আমি এখনও বলিতেছি: আপনি স্বয়ং যুদ্ধে যাইবেন না, মারওয়ানের সংবাদ না লইয়া কখনও নগর পরিত্যাগ করিবেন না।”

 এজিদ মহাক্রোধে বলিলেন, “আমি এখনই যুদ্ধে যাইব। কোথায় —ওমর কোথায়?—হাসেম কোথায়?”

 শশব্যস্তে সৈন্যাধ্যক্ষগণ উপস্থিত হইলেন। পুনরায় এজিদ বলিলেন, “মদিনা-আক্রমণে, হানিফার বধ-সাধনে, আমার সহিত এখনই সসৈন্য়ে যাত্রা করিতে হইবে। প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ-পদে আজ ওমর বরিত হইল, যাও—প্রস্তুত হও, যত সৈন্য নগরে আছে, তাহাদিগকে লইয়া প্রস্তুত হও।”