একবিংশ প্রবাহ
হুতাশনের দাহন-আশা, ধরণীর জলশোষণ-আশা, ভিখারীর অর্থলোভ-আশা, চক্ষুর দর্শন-আশা, গাভীর তৃণভক্ষণ-আশা, ধনীর ধনবৃদ্ধির আশা, প্রেমিকের প্রেমের আশা, সম্রাটের রাজ-বিস্তারের আশার যেমন নিবৃত্তি নাই, হিংসাপূর্ণ পাপ-হৃদয়ে দুরাশারও তেমনি নিবৃত্তি নাই—ইতি নাই। যতই কার্য্যসিদ্ধি, ততই দুরাশার শ্রীবৃদ্ধি। জয়নাবের রূপমাধুরী হঠাৎ এজিদ-চক্ষে পড়িল, এজিদের অন্তরে দুরাশার সঞ্চার হইল। স্বামী জীবিত,—জয়নাবের স্বামী আবদুল জব্বার জীবিত; অত্যাচারে, বল প্রকাশে মাবিয়ার নিতান্ত অমত, অথচ এজিদের জয়নাব-রত্ন লাভের আশা! কি দুরাশা—সে কার্য্যও সিদ্ধ হইল, কিন্তু আশার ইতি হইল না। সে রত্নখচিত সজীব পুষ্পহার বিধিনিবন্ধে যে কণ্ঠ শোভা করিল—যাহার হৃদয় শীতল করিল—সেই-ই কণ্টক। এজিদ-চক্ষে হাসান বিষম কণ্টক; তাহার জীবন অন্ত করিতে পারিলেই আশা পূর্ণ হয়! তাহাও ঘটিল; কিন্তু আশার ইতি হইল না। জয়নাব যাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহার জীবনপ্রদীপ নির্ব্বাণ না করিলে কখনই এজিদের মনের আশা পূর্ণ হইবে না! ঘটনাক্রমে কারবালা-প্রান্তরে প্রভাত হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত রক্তের স্রোত বহিয়া তাহাও ঘটিয়া গেল। সৈন্যসামন্ত ও প্রহরী-বেষ্টিত হইয়া সে মহামূল্য জয়নাব-রত্ন দামেস্ক নগরে আসিল, কিন্তু আশার ইতি হইল না।
বৃদ্ধ মন্ত্রী হামান কথার ছলে বলিয়াছিলেন, “যে আমার নয়, আমি তাহার কেন হইব?” এ নিদারুণ বচন কি আহত হৃদয় মাত্রেই মহৌষধ? না— রূপজ মোহ যে হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে অধিকার করিয়া বসিয়াছে, সে হৃদয় যথার্থ মানবহৃদয় হইলেও সময়ে সময়ে পশুভাবে পরিণত হয়। প্রথম কথাতেই জয়নাবের মনের ভাব এজিদ অনেক জানিতে পারিয়াছেন, তাঁহার হস্তে সূতীক্ষ্ণ ছুরিকাও দেখিয়াছেন। সে অস্ত্র এজিদের বক্ষে বসিবে না, যাঁহার অস্ত্র, তাঁহারই বক্ষ, তাঁহারই শোণিত।—কিন্তু বিনা আঘাতে, বিনা রক্তপাতে, নিজ