পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৯
উদ্ধার পর্ব্ব—একবিংশ প্রবাহ

হৃদয়ের রক্ত আজীবন শরীরের প্রতি লোমকূপ হইতে যে অদৃশ্যভাবে ঝরিতে থাকিবে, তাহাও এজিদ বুঝিয়াছিলেন। তবে?—আশা আছে। দুরাশ কুহকিনী এজিদের কানে কয়েকটি কথার আভাস দিয়াছে,—তাহাতেই এজিদের অন্তরে এই কথা। এই কথা কি?—কমলে গঠিত কোমলাঙ্গীর হৃদয় কি পাষাণ? কোমল হস্তে লৌহ অস্ত্র? কোমল অক্ষিতে বজ্রদৃষ্টি? কোমল বদনে কর্কশ ভাষা? কোমল প্রাণে কঠিন ভাব?—অসম্ভব! অসম্ভব!! সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং বিপরীত!!! অবশ্যই ইহার কোন কারণ আছে। জয়নাল, হানিফা প্রভৃতি জীবিত।— সেই কি মুল কারণ? তাহারা ভব-ধাম হইতে চিরকালের জন্য সরিলে নিশ্চয়ই ও বিপরীত ভাব কখনই থাকিবে না। নিশ্চয়!! নিশ্চয়!!! চিরকালের জন্য সে সময় জয়নাবের সে পদ্মচক্ষুতে এজিদের ছায়া ভিন্ন আর কোন ছায়াই দেখা যাইবে না। সে হৃদয়ে সর্ব্বদা এজিদ-রূপ ব্যতীত আর কোন রূপ জাগিবে না। নিশ্চয়ই কমলে কমল মিশিয়া কোমল ভাব ধারণ করিবে। আপাদমস্তকে, অন্তরে, হৃদয়ে, প্রাণে, শরীরে উত্তাপবিহীন সুকোমল বিজলী-ছটা সবেগে খেলিতে থাকিবে!

 দুরাশা! দুরাশা!!

 কুহকিনী আশার এই ছলনায় এজিদ কাহারও কথায় কর্ণপাত করিলেন না, দুন্দুভি বাজাইয়া লোহিত নিশান উড়াইয়া যাত্রা করিলেন। ওমর, হাসেম, আবদুল্লাহ্ জেয়াদ প্রভৃতি পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্য মহারাজের পশ্চাদ্‌বর্তী হইলেন। গুপ্তচর সন্ধানীরা কেহ প্রকাশ্যে, কেহ অপ্রকাশ্যে, কেহ ছদ্মবেশে, সকলের অগ্রে নানা সন্ধানে নানা পথে ছুটিল। তাহারা যেখানে যাহা শুনিতেছে, দেখিতেছে, মুহূর্ত্তে মুহুর্ত্তে আসিয়া এজিদকে জানাইয়া যাইতেছে।

 একজন আসিয়া বলিল, “বাদশাহ্-নামদারের জয় হউক। কতকগুলি সৈন্য নগরাভিমুখে আসিতেছে।” এজিদের মুখভাব কিঞ্চিৎ মলিন হইল।

 কিছুক্ষণ পরে আবার একজন আসিয়া বলিল, “আমি বিশেষ লক্ষ্য করিয়া আসিয়াছি, যাহা আসিতেছে তাহার দামেস্কের সৈন্য।”