পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৬০

 এজিদ মহাসন্তুষ্ট হইয়া সংবাদ-বাহককে কিছু পুরস্কৃত করিতে আদেশ দিয়া বিজয়-বাজনা বাজাইতে আজ্ঞা করিলেন।

 কিছুক্ষণ পরে সংবাদ আসিল, “বাদশাহ্-নামদার। প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান এবং প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ অলীদ মহামতি আসিতেছেন।

 এজিদ মহাহর্ষে বলিতে লাগিলেন, “ওমর! জেয়াদ! শীঘ্র আইস, বিজয়ী বীরদ্বয়কে সাদরে সম্ভাষণ করিয়া গ্রহণ করি। কি সুযাত্রায় আজ অশ্বে আরোহণ করিয়াছিলাম। যে হানিফার নামে জগৎ কম্পিত সেই হানিফা বন্দীভাবে, কিম্বা জীবনশূন্য দেহে, কিম্বা খণ্ডিতশিরে দামেস্কে আনীত হইতেছে। ধন্য বীর মারওয়ান! কিছু না করিয়া সে আর দামেস্কে ফিরিয়া আসিতেছে না! ধন্য মারওয়ান! খণ্ডিত হউক আর অখণ্ডিত হউক, হানিফার মস্তক, বন্দীগৃহের সম্মুখে লটকাইয়া দিব! জয়নাল-শিরও আগামী কল্য ঐ স্থানে বর্শার অগ্রে স্থাপন করিব। দেখিবে আকাশ, দেখিবে সূর্য্য, দেখিবে জগৎ, দেখিবে দামেস্কের নরনারী, দেখিবে জয়নাল—এজিদের ক্ষমতা!”

 এজিদ যতই অগ্রসর হইতেছেন, ততই আশার ছলনায় মোহিত হইয়া ভাবিতেছেন: এখন মদিনার রাজা কে? মারওয়ানকে উভয় রাজ্যের মন্ত্রীত্বপদে অভিষিক্ত করিব, আর আজ আমার নিকট যে যাহা চাহিবে তাহাই দান করিব। বিজয়ী সেনাগণকে বিশেষরূপে পুরস্কৃত করিব। সকল সৈন্যগণকেও পুরস্কৃত করিব। কাহাকেও বঞ্চিত করিব না।

 এজিদ আশার প্রপঞ্চে পড়িয়া যাহা কিছু বলিতেছেন, তাহাতে হাসিবার কথা নাই। আশা আর ভ্রম, এই দু’য়েই মানুষের পরিচয়। আমরা ভবিষ্যৎ বিষয়ে অন্ধ না হইলে কখনই ভ্রমকূপে ডুবিতাম না, আশার কুহকে ভুলিতাম না এবং সুখ-দুঃখের বিভিন্নতাও বুঝিতাম না। তাহা হইলে যে কি ঘটিত, কি হইত ঈশ্বরই জানেন!

 মারওয়ান ওত্‌বে অলীদসহ দামেস্কাভিমুখে আসিতেছেন, এজিদও মহাহর্ষে সৈন্যগণসহ বিজয়ী বীরদ্বয়ের অভ্যর্থনা হেতু অগ্রসর হইতেছেন। মারওয়ান কখনই পরাস্ত হইবে না, মারওয়ান পৃষ্ঠ দেখাইয়া কখনই পলাইবে না, কার্য্য উদ্ধার না করিয়া দামেস্কে আসিবে না—এজিদের এই দৃঢ় বিশ্বাস।