পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৬২

 এজিদ আরও মনোনিবেশ করিলেন, স্থিরভাবে অশ্ব-বল্‌গা ধরিয়া কান পাতিয়া শুনিতে লাগিলেন,—স্পষ্টতঃ ভেরীর ভীষণ নাদ, নাকাড়ার খরতর আওয়াজ, শিঙ্গার ঘোর রোল ক্রমেই নিকটবর্ত্তী হইল। বাজনা শুনিতে শুনিতে তিনি দেখিতে পাইলেন—মোহাম্মদী নিশান-দণ্ডের অগ্রভাগ সজ্জিত, পতাকায় জাতীয় চিহ্ন, আরোহী এবং পদাতিক সৈন্যগণের হস্তস্থিত বর্শাফলকের চাকচিক্য, স্ফূর্ত্তিবিশিষ্ট তেজীয়ান্ অশ্বের পদচালনা।

 এজিদ সদর্পে বলিলেন, “যাহার জন্য আমাকে বহু দূর যাইতে হইত, ঘটনাক্রমে তাহাকে নিকটেই পাইলাম। চিন্তা কি? মারওয়ান, এত আশঙ্কা কি? চালাও অশ্ব—এখনই আক্রমণ করিব।”

 “মহারাজ! আমরা সর্ব্ববলে বলীয়ান্ না হইয়া এ সময়ে আর আক্রমণ করিব না। আমাদের বহু সৈন্য মোহাম্মদ হানিফার হস্তে মারা গিয়াছে। সৈন্যবল বৃদ্ধি না করিয়া আর আক্রমণের নামও মুখে আনিবেন না। আত্মরক্ষা, নগর-রক্ষা—এই দুইটির প্রতিই বিশেষ লক্ষ্য করিয়া কার্য্য করিতে হইবে; বিশেষত, ইহাতে আমার আর একটি উদ্দেশ্য সফল হইবে।”

 “কি উদ্দেশ্য সফল হইবে?”

 “মহারাজ! কারবালা-প্রান্তরে হোসেন যেমন জলবিহনে শুষ্ককণ্ঠ হইয়া সারা হইয়াছিল, সেইরূপ, দামেস্ক-নগরে হানিফা অন্নবিহনে সর্ব্বস্বান্ত হইবে। এ রাজ্যে কে তাহাদের আহার যোগাইবে? কে তাহাদের সাহায্য করিবে? আমরা আক্রমণের নামও করি না, উহারাই আক্রমণ করুক। আক্রমণের ইচ্ছা না হয়, শিবির নির্ম্মাণ করিয়া বসিয়া থাকুক; অগ্রে আমরা কিছুই বলিব না। উহারা যতদিন বসিয়া থাকিবে, ততদিনই আমাদের মঙ্গল। উহাদের অন্নের অনটন পড়ুক, ক্রমে স্বাস্থ্যও ভঙ্গ হউক! সময় পাইলে আমরা মনোমত প্রস্তুত হইতে পারিব। সে সময় আমরা বিষম বিক্রমে আক্রমণ করিব।”

 এজিদ অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া ইহাতে সম্মত হইলেন, আক্রমণ করিবার জন্য আর অগ্রসর হইলেন না, অন্য চিন্তায় মন দিলেন।

 ওদিকে গাজী রহ্‌মান আপন সুবিধামত স্থানে শিবির নির্ম্মাণের আদেশ দিয়া গমনে ক্ষান্ত হইলেন। মোহাম্মদ হানিফা, মস্‌হাব কাক্কা প্রভৃতি গাজী