পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২২

করিল? জয়নাবের মত পতিপরায়ণ ধর্ম্মশীলা, পতিপ্রাণা, নম্রভাবা রমণী এ প্রদেশে অতি কমই দেখা যায়। আবদুল জব্বারের প্রাণ এত কঠিন, ইহা ত আমি আগে জানিতাম না। কোন্ প্রাণে সে সােণার জয়নাবকে পথের ভিখারিণী করিয়া বিষাদ-সমুদ্রে ভাসাইয়া দিয়াছে।”

 মােসলেম বলিলেন, “ভাই! ঈশ্বরের কার্য্য মনুষ্যবুদ্ধির অগােচর। তিনি কি উদ্দেশ্য সাধন করিতে যে কি করেন, কাহার মনের কি গতি, কি কারণে কোন্ কার্য্য সাধনে কোন্ সময়ে কি কৌশলে কিরূপ করিয়া যে, কোন্ কার্য্যের অনুষ্ঠান করেন, তাহা তিনিই জানেন। আমরা ভ্রমপূর্ণ অজ্ঞ মানব। আমাদের এই ক্ষুদ্র মস্তকে, এই ক্ষুদ্র চিন্তায়, সেই অনন্ত বিশ্বকৌশলীর বিচিত্র কৌশলের অণুমাত্র বুঝিবার ক্ষমতাও নাই, সাধ্যও নাই।”

 আক্কাস্ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত দিন আবদুল জব্বার জয়নাবকে পরিত্যাগ করিয়াছে?”

 “অতি অল্প দিন মাত্র।”

 “বােধ হয়, এখনও এদ্দাৎ (শাস্ত্রসঙ্গত বৈধব্যব্রত) সময় উত্তীর্ণ হয় নাই?”

 “প্রস্তাবে ত আর কোন বাধা নাই। এদ্দাৎ সময় উত্তীর্ণ হইলেই শুভকার্য্য সম্পন্ন হইবে।”

 “ভাই মােস্‌লেম! আমিও তােমাকে আমার পক্ষে উকিল নিযুক্ত করিলাম। জয়নাবের নিকট প্রথমে এজিদের প্রস্তাব, শেষে আমার প্রার্থনার বিষয়ও প্রকাশ করিও। রাজভােগ পরিত্যাগ করিয়া সে আমার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিবে, যদিও ইহা সম্ভব নহে, তথাপি ভুলিও না। দেখ ভাই! আশাতেই সংসার, আশাতেই সুখ, এবং আশাতেই জীবন। আশা কাহারও কম নহে। আমার কথা ভুলিও না। জয়নাব রূপ-লাবণ্যে দেশ-বিখ্যাত, পুরুষমাত্রেরই চক্ষু জয়নাব-রূপে মােহিত; স্বভাব, চরিত্র, ধীরতা ও নম্রতাগুণে জয়নাব সকলেরই নিকটেই সমাদৃত—তাহা আমি বেশ জানি। এ অবস্থাতেও বােধ হয় আমার আশা দুরাশা নহে। দেখ ভাই,ভুলিও না। মনের অধিকারী-ঈশ্বর। তিনি যেদিকে মন ফিরাইবেন, যেদিকে মন চালাইবেন,