পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৭০

 “বিধর্ম্মীদিগের বাক্‌চাতুরীই এই প্রকার—প্রস্তর পূজকদিগের স্বভাবই এই।”

 “ওরে বর্ব্বর। প্রস্তরে কি ঈশ্বরের মাহাত্ম্য নাই? দেখ,— দেখ্— লৌহতে কি আছে।” এই বলিয়া আঘাত—অমনি প্রতি-আঘাত!

 সোহ্‌রাব বলিল,—“রে আম্বাজী! তুই-ই মোহাম্মদ হানিফা; কেন আমাকে বঞ্চনা করিতেছিস্? আমার আঘাত সহ্য করিবার লোক জগতে নাই। সোহ্‌রাবের অস্ত্র এক অঙ্গ দুইবার স্পর্শ করে না।”

 এই কথাটা কেবল ওমর আলী শুনিলেন মাত্র। তারপর যদি কেহ দেখিয়া থাকেন, তবে তিনিই দেখিয়াছেন: সোহ্‌রাবের দেহ অশ্ব হইতে ভূতলে পড়িয়া গেল। কাহার আঘাত? আর কাহার,—ওমর আলীর!

 সোহ্‌রাব-নিধন এজিদের সহ্য হইল না। মহাক্রোধে নিষ্কোষিত অসিহস্তে সমর-প্রাঙ্গণে আসিয়া তিনি বলিলেন,—তুই কে? আমার প্রাণের বন্ধু সোহ্‌রাবকে বিনাশ করিলি? বল্‌ত আম্বাজী, তুই কে?”

 “আবার পবিচয়? বল্ত কাফের তুই কে?”

 “আমি দামেস্কের অধিপতি। আরও বলিব? আমার নাম এজিদ।”

 ওমর আলীর হৃদয় কাঁপিয়া গেল, ভয়শূন্য হৃদয়ে মহাভয়ের সঞ্চার হইল। ভ্রাতৃআজ্ঞা বারবার মনে পড়িতে লাগিল। প্রকাশ্যে তিনি বলিলেন:

 “তুই কি যথার্থ ই এজিদ?”

 “কেন, এজিদ নামে এত ভয় কেন?”

 “সহস্র এজিদে আমার ভয় নাই, কিন্তু—”

 “ও সকল ‘কিন্তু’ কিছুই নহে! ধর্ এজিদের আঘাত।”

 “আমি প্রস্তুত আছি।”

 এজিদ মহাক্রোধে তরবারি দ্বারা আঘাত করিলেন। ওমর আলী তাহা বর্ম্মে উড়াইয়া দিয়া বলিলেন—“তুই যদি যথার্থই এজিদ, তবে তোর আজ পরম সৌভাগ্য।”

 “আমার সৌভাগ্য চিরকাল।”

 “তা বটে—কি বলিব, ভ্রাতৃ-আজ্ঞা!”