পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৭২

অঙ্গুলি স্পর্শ করিতে পারে? তুই যাহাই মনে করে থাকিস্‌, নিশ্চয় জানিস্‌, —আজ তোর জীবনের শেষ।”

 “কথাটা মিথ্যা বোধ হইতেছে না। যাহা হউক, হয় অস্ত্রত্যাগ কর, না হয় পলাও।”

 “আমি পলাইব? তোর জীবনের শেষ না করিয়া পলাইব?”

 এজিদ পুনরায় তরবারি দ্বারা আঘাত করিলেন,—বৃথা হইল। পরিশেষে ফাঁস-হস্তে তিন চাবিবার ওমর আলীকে প্রদক্ষিণ করিয়া ওমর আলীর গলায় ফাঁস নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন, কিন্তু ফাঁসেতে আটকায় কৈ? ওমর আলী ভ্রাতার নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন যে, আজ তিনি এজিদের প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করিবেন না। এজিদ এখন অস্ত্র ছাড়িয়া, মল্লযুদ্ধ আরম্ভ করিলেই ওমর আলীর মনের সাধ পূর্ণ হয়। তিনি সেই চিন্তায় আছেন, সময় খুঁজিতেছেন —কার্য্যেও তাহাই ঘটিল।

 মোহাম্মদ হানিফা শিবিরে বসিয়া যুদ্ধের সংবাদ লইতেছেন মাত্র? এ পর্য্যন্ত কেহই পরাস্ত হয় নাই। এজিদ স্বয়ং যুদ্ধে আসিয়াছেন, আর হানিফ-বোধে ওমর আলীকে যথাসাধ্য আক্রমণ করিয়াছেন,—এ কথার তত্ত্ব কেহই সন্ধান করেন নাই, হানিফাও শুনিতে পান নাই। এজিদ স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে আসিবেন, ইহা কেহ মনেই করে নাই।

 এজিদ নিশ্চয় জানিয়াছেন যে, ইনিই মোহাম্মদ হানিফা। উভয় ভ্রাতার আকৃতি প্রায় এক; তবে সামান্য একটু যে প্রভেদ, তাহা জগৎকার সৃষ্টির মহিমা ও কৌশল। এজিদ একদিন মাত্র দেখিয়া সে প্রভেদ বিশেষরূপে নির্ণয় করিতে পারেন নাই। তাহার উপর এ পর্যন্ত সে অস্ত্র নিক্ষেপ করিল না দেখিয়া এজিদ বিস্মিত হইলেন। মল্লযুদ্ধ করিয়া বাঁধিয়া ফেলিব—মল্লযুদ্ধে নিশ্চয়ই ধরিব—ইহাই এখন এজিদের মনের ভাব।

 উভয়ের মনের আশাই উভয়ে সফল করিবেন। প্রকৃতি কাহার অনুকুল, তাহা কে বলিতে পারে। উভয় বীরই অস্ত্র পরিত্যাগ করিলেন, মল্লযুদ্ধ আরম্ভ হইল। বীর-পদ-দলনে পদতলস্থ মৃত্তিকা স্বাভাবিক ছিদ্রে অঙ্গ মিশাইয়া ক্রমে সরিতে লাগিল।