পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৩
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রয়েবিংশ প্রবাহ

 মারওয়ান, আবদুল্লাহ্ জেয়াদ প্রভৃতি এই অলৌকিক যুদ্ধে এজিদকে লিপ্ত দেখিয়া মহাবেগে অশ্ব চালাইল। হানিফা-পক্ষীয় কয়েকজন যোদ্ধা ওমর আলীকে হঠাৎ মল্লযুদ্ধে রত দেখিয়া যুদ্ধস্থলে উপস্থিত হইলেন। এজিদ কতবার ওমর আলীকে ধরিতেছেন, কিন্তু ধরিয়া রাখিতে পারিতেছেন না! ওমর আলীও এজিদকে ধরিতেছেন, কিন্তু তাহাকে বশে আনিতে পারিতেছেন না!

 মোহাম্মদ হানিফাপক্ষীয় বীরগণ এজিদকে চিনিয়া চতুর্দ্দিক অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন এবং ওমর আলীর মল্লযুদ্ধের কারণ বুঝিলেন। এজিদের প্রতি কাহারও অস্ত্রনিক্ষেপ করিবার অনুমতি নাই। কাজেই ওমর আলীরও নিস্তার নাই। হায়! হায়!! একি কি হইল— মনে মনে এই আন্দোলন করিয়া মোহাম্মদ হানিফার নিকট এই কথা বলিতে কেহ কাহারও অপেক্ষা না করিয়া সকলেই শিবিরাভিমুখে ছুটিলেন।

 এদিকে এজিদ মল্লযুদ্ধের প্যাঁচে ওমর আলীর গ্রীবা এবং উরু সাপটিয়া ধরিয়াছেন। ওমর আলী সে বন্ধন কাটাইয়া এজিদকে ধরিলেন। সেই সময় মারওয়ান, জেয়াদ প্রভৃতি সকলেই ত্রস্তে অশ্ব হইতে নামিয়া মহাবীর ওমর আলীকে ধরিলেন এবং ফাঁসের দ্বারা তাঁহার হস্ত, পদ, গ্রীবা বাঁধিয়া ‘জয় জয়’ রব করিতে করিতে আপন শিবিরাভিমুখে আসিতে লাগিল।

 মোহাম্মদ হানিফা এজিদের সংবাদ পাইয়া সজ্জিত বেশে শিবির হইতে বহির্গত হইয়া দেখিলেন: সমরাঙ্গণে জন প্রাণী মাত্র নাই। এজিদের শিবিরের নিকট মহা কোলাহল—জয় জয় রব—তুমুল বাজনা! আর বৃথা সাজ—বৃথা গমন! ভ্রাতৃ-আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে গিয়া আজ ওমর আলী বন্দী!

 মোহাম্মদ হানিফা কি করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া তিনি মহা চিন্তায় পড়িলেন।

 বিপক্ষ দলে বাদ্যের তুফান উঠিল, দামেস্ক-প্রান্তর হর্ষে এবং বিষাদে কাঁপিয়া উঠিল। এজিদ-দলের প্রথম কথা—মোহাম্মদ হানিফা বন্দী; অবশেষে সাব্যস্ত হইল, মোহাম্মদ হানিফা নহে, এ তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা—