পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চতুর্ব্বিংশ প্রবাহ

 আজ ওমর আলীর প্রাণবধ—এ সংবাদে কেহ সুখী, কেহ দুঃখী! নগরবাসীরা কেহ ম্লানমুখে বধ্যভূমিতে যাইতেছে—কেহ বা মনের আনন্দে হাসি-রহস্যের নানা কথার প্রসঙ্গে বধ্যভূমিতে উপস্থিত হইতেছে। শূলদণ্ড দণ্ডায়মান রহিয়াছে। স্বপক্ষ, বিপক্ষ সৈন্যদল যাহাতে ওমর আলীর ব্ধক্রিয়া স্পষ্টভাবে দেখিতে পারে, মন্ত্রী মারওয়ান সে উপায় বিশেষভাবে বিবেচনা করিয়াছে। দিনমণির উদয় হইতে না হইতেই নাগরিকদল দলে দলে দামেস্ক-প্রান্তরে আসিয়া সমবেত হইতে লাগিল। প্রায় সকল লোকের মুখেই একই কথা—“আজ শূলদণ্ডের অগ্রভাগ রক্তমাখা হইয়া ওমর আলীর মজ্জা ভেদ করিবে। কাল মস হাব কাক্কার খণ্ডিতশির ধরায় লুণ্ঠিত হইবে; তাহার পর হানিফার দশা যাহা ঘটিবে, তাহা সহজেই বুঝিতে পারা যায়।”

 কথা গোপন থাকিবার নহে; বিশেষত, মন্দ কথা বায়ুর অগ্রে অগ্রে অতি গুপ্তস্থানেও প্রবেশ করে। বন্দীগৃহেও ঐ কথা! ওমর আলীর প্রাণবধের কথা শুনিয়া শাহ্‌রেবানুর ও হাস্‌নেবানুর মুখের কথা বন্ধ হইয়াছে, তাঁহাদের অন্তরে ব্যথা লাগিয়াছে। ক্রন্দন ভিন্ন তাঁহাদের আর উপায় কি? হোসেন-পরিজনের দুঃখের অন্ত নাই। তাহাদের রক্ত, মাংস, অস্থি চর্ম্মযুক্ত শরীর বলিয়াই এত সহ্য হইতেছে,—পাষাণে গঠিত হইলে এত দিন সে শরীর বিদীর্ণ হইত,—লৌহনির্ম্মিত হইলে কোন্ দিন গলিয়া যাইত।

 শাহ্‌ৱেবানু দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া করুণস্বরে বলিতে লাগিলেন,—“হায় সর্ব্বস্ব গেল, প্রাণ গেল, রাজ্য গেল, স্বাধীনতা গেল। আশা ছিল, জয়নাল আবেদীন বন্দীগৃহ হইতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হইবে। কিন্তু যিনি জয়নালের উদ্ধার হেতু কত কষ্ট, কত বিপদ, কত যন্ত্রণা সহ্য করিয়া দামেস্কের প্রান্তর পর্য্যন্ত আসিলেন—তিনি আসিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। আর ভরসা