পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩
মহরম পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

তাহা নিবারণ করিতে এজিদের রূপের ক্ষমতা নাই, অর্থেরও কোন ক্ষমতা নাই। সেই ক্ষমতাতীতের নিকটে কোন ক্ষমতারই ক্ষমতা নাই। যাহা হউক, আমার প্রার্থনা জয়নাবের নিকট অবশ্যই জানাইবে। আমার মাথা খাও, ঈশ্বরের দোহাই, এ বিষয়ে অবহেলা করিও না।”

 এইরূপ কথোপকথনের পর পরস্পর অভিবাদন করিয়া উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে চলিয়া গেলেন। মোস্‌লেম কিছু দূর যাইয়াই দেখিলেন, মাননীয় এমাম হাসান সশস্ত্র মৃগয়ার্থ বহির্গত হইয়াছেন। এমাম হাসান এক্ষণে স্বয়ং মদিনার সিংহাসনে বসিয়া শাহীমুকুট শিরে ধারণ করিয়াছেন; রাজ্যভার স্বহস্তে গ্রহণ করিয়াছেন। মোস্‌লেমকে দূর হইতে আগমন করিতে দেখিয়া তিনি আলিঙ্গনার্থ হস্ত প্রসারণ করিলেন। মোস্‌লেম পদানত হইয়া হাসানের পদচুম্বন করিয়া জোড়করে সম্মুখে দণ্ডায়মান রহিলেন।

 শাহজাদা হাসান বলিলেন, “ভাই মোস্‌লেম। আমার নিকট এত বিনয় কেন? কি বলিতে ইচ্ছা করিতেছ, অসঙ্কোচে প্রকাশ কর। তুমি ত আমার বাল্যকালের বন্ধু।”

 মোস্‌লেম কহিলেন, “আপনি ধর্ম্মের অবতার, ঐহিক-পারত্রিক—উভয় রাজ্যের রাজা। আপনার পদাশ্রয়েই সমস্ত মুসলমানের পরিত্রাণ, আপনার পবিত্র চরণযুগল দর্শনেই মহাপুণ্য; আপনার পদধূলি পাপ-বিমোচনের উপযুক্ত মহৌষধি; আপনাকে অন্তরের সহিত ভক্তি করিতে কাহার না ইচ্ছা করে? আপনার পদসেবা করিতে কে না লালায়িত হয়? আপনার উপদেশ শ্রবণ করিতে কে না সমুৎসুক হইয়া থাকে। আমি দাসানুদাস, আদেশ প্রতিপালনই আমার সৌভাগ্য।”

 “আজ আমার শিকারযাত্রা সু-যাত্রা। আজিকার প্রভাত আমার সু-প্রভাত। বহুদিনান্তে আজ বাল্যসখার দেখা পাইলাম। এক্ষণে তুমি ভাই কোথায় যাইতেছ?

 “এজিদের পরিণয়ের পয়গাম জয়নাবের নিকট লইয়া যাইতেছি। হজরত মাবিয়ার আদেশ, যত শীঘ্ন হয়, জয়নাবের অভিপ্রায় জানিয়া সংবাদ দিতে হইবে।”