পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৮০

এজিদ এখন হানিফার প্রাণ লইতে অগ্রসর হইয়াছে। সে তোকে কয়েকবার মারিতে গিয়া ও নিরস্ত হইয়াছে; আজ তোকে দেখিলে তা’র ক্রোধের কী সীমা থাকিবে? বন্দী পলাইলে কার না রোষের ভাগ দ্বিগুণ হয়? জয়নাল, তোর এ বুদ্ধি কেন হইল?”

 শাহ্‌রেবানু এইরূপে দুঃখ প্রকাশ করিলেন। সালেমা বিবিও তাঁহাকে অনেক প্রকারে বুঝাইলেন। শেষে সালেমা বিবি বলিলেন,—“শাহ্‌রেবানু, স্থির হও। জয়নাল অবোধ নহে। তাহার পিতার সমস্ত গুণই তাহাতে রহিয়াছে। ঈশ্বর তাহাকে বীরপুরুষ করিয়াছেন। এজিদের অত্যাচার তাহার হৃদয়ে আঁকা রহিয়াছে। সে একা কিছুই করিতে পারিবে না। আবার আমাদিগকে বন্দীখানায় রাখিয়া এমন কোনও কার্য্যে হঠাৎ হস্তক্ষেপ করিবে না যাহাতে সে মারা পড়ে বা ধরা পড়ে। তাহার আশা অনেক! ঈশ্বরে নির্ভর কর, এ সকল তাঁহারই লীলা। তুমি স্থির হও, ঈশ্বরের নাম করিয়া জয়নালকে আশীর্ব্বাদ কর,তাহার মনোবাঞ্ছা যেন পূর্ণ হয়। তুমি নিশ্চয় জানিও, এজিদহস্তে তাহার মৃত্যু নাই। সেই-ই মদিনার রাজা, সেই-ই দামেস্কের রাজা। আমি মাননীয় নূরনবীর মুখে শুনিয়াছি, জয়নাল আবেদীন দ্বারা মদিনার সিংহাসন রক্ষা হইবে, ইমাম বংশ জীবিত থাকিবে, রোজকেয়ামত পর্য্যন্ত জয়নাল আবেদীনের বংশধরগণ জগতে সকলের নিকট পূজনীয় হইয়া থাকিবে। নূরনবীর বাণী কি কখনও মিথ্যা হয়? ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা কর: জয়নালের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হউক।”