পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৩
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

 মোহাম্মদ হানিফা শুধু আক্ষেপ করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই। গাজী রহ্‌মানও কেবল বিলাপ-বাক্য শুনিয়াই নিশ্চিন্ত হন নাই। তাঁহাদের মস্তিষ্ক-সিন্ধু আজ বিশেষরূপে আলোড়িত হইয়াছে,—সহসা এজিদ-শিবির আক্রমণ করিবেন না, অথচ ওমর আলীকে উদ্ধার করিবার আশা তাঁহাদের অন্তরের এক কোণে বিশেষ গোপনভাবে রহিয়াছে। বিনা বেতনের চাকরে গৃহকার্য্যের সুবিধা নাই, তাহাতে আবার যুদ্ধকাণ্ডে! অবৈতনিক সৈন্য—কি ভয়ানক কথা! কি সাংঘাতিক ভ্রম! এ ভ্রম কাহার?—

 এজিদ বস্ত্রমণ্ডপে দরবার আহ্বান করিয়া স্বর্ণময় আসনে মহাগর্ব্বিতভাবে বসিয়া আছেন। রাজমুকুট শিরে শোভা পাইতেছে। মন্ত্রীপ্রবর মারওয়ান দক্ষিণ পার্শ্বে দণ্ডায়মান। সৈন্যশ্রেণী দরবার-সীমা ঘিরিয়া গায় গায় মিশিয়া, অসিহস্তে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। পঞ্চবিংশতি রথী নিষ্কোষিত কৃপাণহস্তে ঘিরিয়া বন্ধনদশায় ওমর আলীকে দরবারে উপস্থিত করিল।

 মারওয়ান ওমর আলীকে বলিল, “ওমর আলী! তুমি যে বন্দী, এ জ্ঞান তোমার আছে?”

 ওমর আলী বলিলেন, “এক্ষণে তোমাদের হস্তে বন্দী—সে জ্ঞান আমার বেশ আছে।”

 “বন্দীর এত অহঙ্কার কেন? নতশিরে করজোড়ে রাজ-সমীপে দণ্ডায়মান হওয়া কি তোমার এ সময়ে উচিত নহে?—রাজাকে অভিবাদন করা কি এ অবস্থায় কর্ত্তব্য নহে? মুহূর্ত্ত পরে তোমার কি দশা ঘটিবে, তাহা কি তুমি মনে করিতেছ না?”

 “আমি সকলই মনে করিতেছি। তোমাদের যাহা ইচ্ছা হয় কর, অনর্ধক বাগবিতণ্ডায় প্রয়োজন নাই। আমি এমন কোন অনুগ্রহের প্রত্যাশা করি যে, নতশিরে ন্যূনতা স্বীকারে দণ্ডায়মান হইব।”

 “সাবধান! সতর্ক হইয়া জিহ্বা চালনা করিও। নম্রভাবে কথা কহা কি তোমাদের কাহারও অভ্যাস নাই? এ রাজ-দরবার, সমরপ্রাঙ্গণ নহে।”

 “আমি প্রথমেই তোমাকে বলিয়াছি, বাগবিতণ্ডায় প্রয়োজন নাই।