“এজিদ যে-কৌশলে এই ঘটনা ঘটাইয়াছে, তাহা সকলই আমি শুনিয়াছি। হজরত মাবিয়া যে যে কারণে এজিদের কার্য্যের প্রতিপোষকতা করিয়াছেন, তাহাও জানিয়াছি। অথচ, মাবিয়া যে, ঐ সকল ষড়যন্ত্রের মূল বৃত্তান্ত ঘুণাক্ষরেও অবগত নহেন, তাহাও আমার জানিতে বাকী নাই।”
“আক্কাস্ও জয়নাবের প্রার্থী। বিশেষ অনুনয় করিয়া, এমন কি, ঈশ্বরের শপথ করিয়া তিনি বলিয়াছেন,—অগ্রে এজিদের প্রস্তাব করিয়া, পরিশেষে আমার প্রস্তাবটি করিও।— এজিদ ও আক্কাস, উভয়েরই পয়গাম লইয়া আমি জয়নাবের নিকট যাইতেছি। তিনি যে কাহার প্রস্তাব গ্রাহ্য করিবেন, তাহা ঈশ্বরই জানেন।”
হাস্য করিয়া হাসান কহিলেন, “মোস্লেম! আক্কাসের প্রস্তাব লইয়া যাইতে যখন সম্মত হইয়াছ, তখন এ গরীবের কথাটিই বা বাকী থাকে কেন? আমিও তোমাকে উকিল নিযুক্ত করিলাম। সকলের শেষে আমার প্রার্থনাটিও জয়নাবকে জ্ঞাপন করিও। স্ত্রীজাতি প্রায়ই ধনপিপাসু হয়, আবার কেহ কেহ রূপের প্রত্যাশিনী হইয়াও থাকে, আমার না আছে ধন, না আছে রূপ। এজিদের ত কথাই নাই, আক্কাস্ও যেমন ধনবান, তেমনি রূপবান। অবশ্য ইহাদের প্রার্থনাই অগ্রগণ্য। জয়নাব-রত্ন ইহাদেরই হৃদয়-ভাণ্ডারে থাকিবার উপযুক্ত ধন। সে ভাণ্ডারে যত্নের ত্রুটি হইবে না, আদরেরও সীমা থাকিবে। স্ত্রীলোকেরা প্রায়ই বাহ্যিক সুখকেই যথার্থ সুখ বিবেচনা করিয়া থাকে। আমার গৃহে সংসারিক সুখ যত হইবে, তাহা তোমার অবিদিত কিছুই নাই। যদিও আমি মদিনার সিংহাসনে উপবেশন করিয়াছি, কিন্তু ধরিতে গেলে আমি ভিখারী। আমার গৃহে ঈশ্বরের উপাসনা ব্যতীত কোন প্রকার সুখ-বিলাসের আশা নাই। বাহ্য জগতে সুখী হইবার এমন কোন উপকরণ নাই যে, তাহাতে জয়নাব সুখী হইবে। সকলের শেষে আমার এই প্রস্তাব জয়নাবকে জানাইতে ভুলিও না। দেখ ভাই! মনে রাখিও। ফিরিয়া যাইবার সময় যেন জানিতে পারি যে, জয়নাব কাহার প্রার্থনা মঞ্জুর করিলেন।” এই বলিয়া পরস্পর অভিবাদনপূর্ব্বক উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিকে গমন করিলেন।