পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৯
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

 ওমর আলী বলিলেন, “মারওয়ান, চিন্তা কি? তুমি যদি আমাকে বধ্যভূমি পর্য্যন্ত লইয়া যাইতে পার, তাহা হইলে আমি ইচ্ছা করিয়াই শূলে চড়িব। তুমি চিন্তা করিও না। যতক্ষণ থাকি, জগতে হাসি-তামাসা করিয়া চলিয়া যাই। মরণ কাহার না আছে? আজ আমার এই প্রকার মরণ হইতেছে; কাল না হউক, কালে তোমাকেও অন্য প্রকারে মরিতে হইবে।

 মারওয়ান মনে মনে বলিতে লাগিল, “এখান হইতে ধরাধরি করিয়া লইয়া গেলেও ত শূলে চড়ান মহাবিপদ দেখিতেছি। আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে ডাকি। এই স্থির করিয়া সে প্রকাশ্যে আদেশ করিল, “আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে ডাকিয়া আন, আর তাহার অধীনে যে কয়েকজন বলবান্ সৈন্য গতকল্য সৈন্যদলে নাম লিখাইয়াছে, তাহাদিগকেও এখানে আসিতে বল।”

 ওমর আলী বলিলেন, “ওহে মন্ত্রি! কোন্ আবদুল্লাহ্ জেয়াদ? কুফা নগরের জেয়াদ?—সেই নিমকহারাম জেয়াদ? —বিশ্বাসঘাতক জেয়াদ? —না অন্য কেহ?”

 “তাহাতে তোমার প্রয়োজন কি?”

 “প্রয়োজন কিছুই নাই—তবে পাপাত্মার মুখখানা চক্ষে দেখিবার ইচ্ছা অনেক দিন হইতেই আছে। তাহাকে শীঘ্র আসিতে বল, মরণকালে দেখিয়া যাই।”

 “তোমার অন্তিমকাল উপস্থিত—এ সময়েও তোমার হাসি-তামাসা—এ সময়েও আমাদিগকে ঘৃণা?”

 “কাহার অন্তিমকাল কোন্ সময় উপস্থিত হয়, তাহা তুমি বলিতে পার,—না, আমি বলিতে পারি?”

 “আমি ত আর তোমার মত নাই যে, কারণ, কার্য্য ও যুক্তি অবহেলা করিয়া কেবল ঈশ্বরের প্রতি চাহিয়া থাকিব? তুমি মনে করিয়াছ যে, আমরা তোমার প্রাণবধ করিতে পারিব না,—আমাদের হস্তে তুমি মরিবে না। ওমর! অঙ্গার যদি হরিদ্রার কান্তি পায়, মশকও যদি সমুদ্র শুষিয়া ফেলে, অচলও যদি সচলভাব ধারণ করে, সূর্য্যদেবও যদি পশ্চিমে উদিত হয়, তথাপি তোমার জীবন কখনই রক্ষা হইতে পারে না। মারওয়ানের হস্ত