পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৯০

হইতে বাঁচিয়া প্রাণ বাঁচাইতে পারিবে না! মুহূর্ত্ত পরেই তোমার চক্ষের পাতা ইহকালের জন্য বন্ধ হইবে। শূলদণ্ড তোমার মস্তক ভেদ করিয়া বহির্গত হইবে। এখনও বাঁচিবার আশা—জেয়াদকে দেখিবার আশা?”

 “অত বক্তৃতা করিও না, অত দৃষ্টান্ত দিয়াও আমাকে বুঝাইও না। ঈশ্বরের মহিমার পার নাই। তিনি হরজত ইব্রাহিমকে অগ্নি হইতে, ইউসুফকে কূপ হইতে, নুহ্‌কে তুফান হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন;—কত জনকে কত বিপদ, কত কষ্ট, কত দুঃখ হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, করিতেছেন এবং করিবেন। আর আমাকে এই সামান্য বন্ধন হইতে, এজিদের আদেশ হইতে, আর নিতান্ত আহাম্মক মন্ত্রী মারওয়ানের হস্ত হইতে উদ্ধার করা তাঁহার কতক্ষণের কার্য্য?”

 “তোমার ঈশ্বর, যুক্তি ও কারণের নিকট পরাস্ত। আমি যদি তোমার এ বন্ধন না খুলিয়া দিই, তোমার ঈশ্বর অদৃশ্যভাবে খুলিয়া দিন দেখি? কারণ ব্যতীত কোন কালে কোন কার্য্য হইয়াছে? দৈব কথা, দৈবশক্তি ছাড়িয়া দাও,—না হয়, তোমার বস্ত্রাঞ্চলে বাঁধিয়া রাখ, ও কথায় মারওয়ানের মন টলিবে না।”

 “মন টলিবে না বটে, কিন্তু টলিতেও ত পারে।”

 “পূর্ব্বেই বলিয়াছি—মারওয়ান তোমার মত পাগল নহে।”

 এদিকে বীরবর আবদুল্লাহ্ জেয়াদ কয়েকজন সজ্জিত সৈন্যসহ মারওয়ানের নিকট উপস্থিত হইয়া উপস্থিত ঘটনা দেখিল—শুনিয়া আরও চমৎকৃত হইল। ক্ষণকাল পরে জেয়াদ গম্ভীরস্বরে বলিল, “আমি ওমর আলীকে বধ্যভূমিতে লইতেছি। কি আশ্চর্য্য! ওমর আলীকে মৃত্তিকা হইতে শূন্যে উত্তোলন করা যায় না,—এ কি কথা? অস্ত্রের সাহায্যে সকলেই সকল কাজই করিতে পারে।”

 জেয়াদ ওমর আলীর নিকট যাইয়া তাঁহাকে মৃত্তিকা হইতে শূন্যে তুলিতে অনেক চেষ্টা করিল—কিন্তু পারিল না। লজ্জা রাখিবার আর স্থান কোথায়? বিরক্তভাবে সে বলিল, “বাহ্‌রাম! তুমি ত আপন বাহুবলের ক্ষমতা অনেক দেখাইয়াছ—উঠাও।”