পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯১
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

 মারওয়ান বলিল, “বাহ্‌রামের বাহুবল দেখিয়া আমিও চমৎকৃত হইয়াছি; সত্য কথা বলিতে কি, ঐ গুণেই আমি বাহ্‌রামকে সৈন্যদলে সাদরে গ্রহণ করিয়াছি। এখন পদোন্নতি পুরস্কার, সকলই—যদি ওমর আলীকে—”

 বাহ্‌রাম, মারওয়ান ও জেয়াদকে অভিবাদন করিয়া বলিল, “গোলাম এখনই হুকুম তামিল করিবে।”

 ওমর আলী আড়নয়নে বাহ্‌রামকে দেখিয়া বলিলেন, “জেয়াদ! কত জনকে ঠকাইতে চাও? স্বপ্ন-বিবরণে প্রভু হোসেনকে ঠকাইয়াছ, মদিনাবিখ্যাত বীর মোস্‌লেমকে ঠকাইয়াছ, আজ আবার কাহাকে ঠকাইবে?”

 জেয়াদ বলিল, “তোমার অস্ত্রের ধার বন্ধ হইয়াছে, কিন্তু কথার ধাটুকু এখনও আছে। এখনই সে ধার বন্ধ হইবে। উপযুক্ত লোকই আনিয়াছি।”

 “উপযুক্ত লোক হইলে অবশ্যই পরাভব স্বীকার করিব, যে যাহা বলিবে, বিনা বাক্যব্যয়ে শুনিব। কিন্তু মরা-বাঁচা ঈশ্বরের হাত।”

 “আরে মূর্খ। এখনও মরা-বাঁচা ঈশ্বরের হাত? তোমর ঈশ্বর এখনও তোমাকে বাঁচাইবেন,—ভরসা আছে? ইচ্ছা করিলে কেবল মহারাজ এজিদ তোমাকে চাইলে বাঁচাইতে পারেন।”

 “রে বর্ব্বর জেয়াদ! তুই ঈশ্বরের মহিমা কি বুঝিবি পামর?”

 “তোমার হিতোপদেশ আর শুনিতে ইচ্ছা করি না। এখন গাত্রোখান কর, যমদূত শিয়রে দণ্ডায়মান।”

 ওমর আলী জেয়াদের কথার কোন উত্তর করিলেন না; একইরূপে দণ্ডায়মান রহিলেন—একেবারে অটল-অচল।

 জেয়াদ বাহ্‌রামকে পুনরায় বলিল, “আর দেখ কি? উহাকে বধ্যভূমিতে লইয়া চল।”

 বাহ্‌রাম সিংহ-বিক্রমে ওমর আলীকে ধরিল এবং ‘জয় মহারাজ এজিদ’ শব্দ করিয়া একেবারে শূন্যে উঠাইয়া বলিল, “হুকুম হইলেই ত এই স্থানে ইহার বধ-ক্রিয়া সমাধা করিয়া দিই।—এক আছাডেই অস্থি চূর্ণ করিয়া মজ্জা বাহির করি।”