পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৯৪

কৌশলে বাহ্‌রাম ওমর আলীকে লইয়া চলিল। কেবল ওমর আলীকে উদ্ধার করিবার জন্যই বাহ্‌রাম ছদ্মবেশে তোর প্রিয় সেনাপতি জেয়াদের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল। আমি মোহাম্মদ হানিফার দাস। যুদ্ধ-সময়ে আগন্তুক সৈন্য-গ্রহণ করার এই প্রতিফল—সৈন্য-বৃদ্ধি লালসায় ভবিষ্যৎ চিন্তা ভুলিয়া যাওয়ার এই ফল। দেখ্‌—এই দেখ্—আজ কি ঘটিল। আগন্তুক সেনায় বিশ্বাস নাই বলিয়া, তোর মন্ত্রিপ্রবর শূলদণ্ডের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চক্রে নূতন সেনা সন্নিবেশিত করিয়াছে। ইহারা বাহির-চক্রে থাকিলে কি জানি কি বিপদ ঘটায়—তাহার এই দুশ্চিন্তায় ঈশ্বর আমাদেরই মঙ্গল করিয়াছেন। এখন দেখ, বাহ্‌রাম জেয়াদের শির লইয়া বীরের মত ওমর আলীকে সঙ্গে লইয়া চলিল।”

 ওমর আলী জেয়াদের কটিবন্ধ হইতে তরবারি সজোরে টানিয়া লইয়া বলিতে লাগিলেন “মোহাম্মদীয় ভ্রাতৃগণ! আর কেন? প্রভুর নাম ঘোষণা করিয়া ঈশ্বরের গুণগান করিতে করিতে শিবিরে চল। ওমর আলী সহজেই উদ্ধার হইল। আর আত্মগোপনে প্রয়োজন কি? প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চক্রের সেনাগণ সমস্বরে “আল্লাহু আক্‌বর। জয় মোহাম্মদ হানিফা! জয় মোহাম্মদ হানিফা!” বলিয়া দাঁড়াইল। দেখিতে দেখিতে তাহারা চতুর্থ এবং পঞ্চম চক্র ভেদ করিয়া ষষ্ঠ চক্রে গিয়া পড়িল। ঘোর সংগ্রাম। অবিশ্রান্তে অসি চলিতে লাগিল। এজিদের বিশ্বাসী সৈন্যগণ, যাহারা ষষ্ঠ এবং সপ্তম চক্রে ছিল, হঠাৎ স্বপক্ষীয় সৈন্যদিগের বিদ্রোহিতা দেখিয়া মহা ভীত হইল। বাহিরের শত্রু ওমর আলীকে যেন না লইয়া যাইতে পারে,—ইহাই তাহাদের লক্ষ্য,—তাহাতেই মনঃসংযোগ ও সতর্কতা। হঠাৎ বিপরীত ভাব দেখিয়া তাহারা কিছুই স্থির করিতে পারিল না;—কোথা হইতে কি ঘটিল, কি কারণে সৈন্যগণ বিদ্রোহী হইল, কিছুই সন্ধান করিতে পারিল না। জেয়াদের খণ্ডিত শির অপরিচিত সৈন্যহস্তে দেখি, মহারাজ এজিদ বাঁচিয়া আছেন কি না, ইহাই তাহাদের সমধিক শঙ্কার কারণ ইইল। চক্র টিকিল না। মুহুর্ত্ত মধ্যে চক্র ভগ্ন করিয়া ওমর আলী এবং বাহ্‌রাম সঙ্গীগণসহ বাহিরে আসিলেন। যাহারা সম্মুখে পড়িল, তাহারাই মৃত্তিকাশায়ী হইল।