পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৯৬

মারওয়ান আর দ্বিরুক্তি করিল না; রাজাদেশ মত ঘোষণা প্রচারের আজ্ঞা করিয়া সপ্তবিংশ অশ্বারোহী সৈন্যসহ অশ্বারোহণে তখনই নগরাভিমুখে ছুটিল।


ষড়্‌বিংশ প্রবাহ

 এক দুঃখের কথা শেষ হইতে না হইতেই আর একটি দুঃখের কথা শুনিতে হইল—জয়নাল আবেদীনকে অদ্যই শূলে চড়াইয়া জেয়াদ-বধের প্রতিশোধ লইবে, এজিদের এই প্রতিজ্ঞা!

 জয়নাল বন্দীগৃহে নাই, একথা এজিদপক্ষীয় একটি প্রাণীও অবগত নহে। মারওয়ান কারাগারের বহির্দ্বারে উপস্থিত হইয়া প্রহরীকে অনুমতি করিল, “তোমরা কয়েকজনে জয়নালকে ধরিয়া আন। সাবধান, আর কাহাকেও কিছু বলিও না।”

 মন্ত্রীবরের আজ্ঞায় প্রহরিগণ কারাগার মধ্যে প্রবেশ করিল। ক্ষণকাল পরে ফিরিয়া আসিয়া তাহারা বলিল, “জয়নাল আবেদীন কারাগৃহে নাই।”

 মারওয়ানের মস্তক ঘুরিয়া গেল, অশ্বপৃষ্ঠে আর থাকিতে পারিল না; উদ্বিগ্নচিত্তে স্বয়ং অনুসন্ধান করিতে চাহিল! কারাগৃহের প্রত্যেক কক্ষ ভন্ন তন্ন করিয়া দেখিল, সে কোনও সন্ধান পাইল না; হোসেন-পরিজনের চিত্তবিকার এবং হাব-ভাব দেখিয়া নিশ্চয় বুঝিল, জয়নাল বিষয়ে ইহারো অজ্ঞাত। বিলম্ব না করিয়া নগর মধ্যে অনুসন্ধানে মারওয়ান প্রবৃত্ত হইল।

 ওদিকে মোহাম্মদ হানিফা এক বিপদ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া দ্বিতীয় বিপদ সম্মুখে আসিয়া পড়িলেন। তিনি বলিলেন,—“যাহার জন্য মহাসংগ্রাম, যাহার উদ্ধারের জন্য মদিনা হইতে দামেস্ক পর্যন্ত স্থানে স্থানে শোণিত-প্রবাহ, শত শত বীরের আত্মবিসর্জ্জন, মদিনার সিংহাসন শূন্য—হায়! হায়!! সেই জয়নালের প্রাণবধ! ইহা অপেক্ষা দুঃখের কথা আর কি আছে? ওমর আলীকে ঈশ্বর রক্ষা করিয়াছেন, সেই ক্রোধে এজিদ জয়নালকে শূলে চড়াইয়া সংহার করিবে। হায়! হায়!! যাহার উদ্ধারের জন্য এতদূর