পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৭
উদ্ধার পর্ব্ব—ষড়্‌বিংশ প্রবাহ

আসিলাম, যাহার উদ্ধার হেতু এত আত্মীয় বন্ধু হারাইলাম—হায়! হায়!! আজ স্বচক্ষে তাহার বধক্রিয়া দেখিতে হইবে! কোন্ পথে কোন্ কৌশলে তাহাকে আনিয়া শূলে চড়াইবে, তাহার সন্ধান কি প্রকারে করি,—উদ্ধারের উপায়ই বা করি কি প্রকারে? সন্ধান করিয়া কোন ফল দেখি না। সামান্য সুযোগ পাইলে যে, জয়নাল নিজের উদ্ধার নিজে করিতে পারিবে,—সে চিন্তা কি তাহার মস্তকে আছে?”

 “হায়! হায়। আমার সকল আশা মিটিয়া গেল। কেন দামেস্কে আসিলাম? কেন এত প্রাণবধ করিলাম? কেন ওমর আলীকে কৌশলে উদ্ধার করলাম? ওমর আলীর প্রাণ দিয়াও যদি জয়নালকে রক্ষা করিতে পারিতাম, তাহা হইলে উদ্দেশ্য ঠিক থাকিত;—বোধ হয়, এমাম-বংশ রক্ষা পাইত। দয়াময়, করুণাময়! জয়নালকে রক্ষা করিও। আজ আমার বুদ্ধির বিপর্যয় ঘটিয়াছে। ভেরীর বাজনার সহিত এজিদের ঘোষণার কথা শুনিয়া আমার মস্তকের মজ্জা শুষ্ক হইয়া যাইতেছে। ভ্রাতঃ ওমর আলী, ভ্রাতঃ আক্কেল আলী (বাহ্‌রাম), প্রিয় বন্ধু মস্‌হাব, চির-হিতৈষী গাজী রহ্‌মান কোথায়? তোমরা জয়নালের প্রাণ-রক্ষার উপায় কর, আমি কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না, চতুর্দিক অন্ধকার দেখিতেছি।”

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “বাদশাহ্‌-নামদার! আপনি ব্যস্ত হইবেন না। ধৈর্য্য ধারণ করুন, পরম কারুণিক পরমেশ্বরের প্রতি নির্ভর করিলে অবশ্যই শান্তিবোধ হইবে। স্থির করিলাম, আজই যুদ্ধের শেষ, নয় জীবনের শেষ! যে কল্পনা করিয়া আজ পর্যন্ত এজিদের শিবির আক্রমণ করি নাই, সে কল্পনার ইতি এখনই হইয়া গেল। যে কোন উপায়ে অগ্রে জয়নালকে হস্তগত করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। কারণ, এজিদ রীতি-নীতির বাধ্য নহে, স্বেচ্ছাচার কলঙ্করেখায় তাহার আপাদ-মস্তক জড়িত। এই দেখুন, জেয়াদ মারা পড়িল, জয়নালের প্রাণবধের আজ্ঞা প্রচারিত হইল,—এই সকল ভাবিয়া চিন্তিয়া স্থির করিয়াছিলাম, যে দিন জয়নাল হস্তগত হইবে, সেই দিনই এই যুদ্ধের শেষ অঙ্ক অভিনয় করিয়া এজিদ-বধ কাণ্ডের যবনিকা-পতন করি। বাদশাহ্‌-নামদার! যদি তাহা না হইল, তবে আর বিলম্ব কি? ভ্রাতৃগণ! চিন্তা কি?—