পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৯৮

সাজ সমরে! বন্ধুগণ! সাজ সমরে, বাজাও ডঙ্কা,—উড়াও নিশান,—ধর তরবারি,—ভাঙ্গ শিবির, মার এজিদ, চল নগরে, দাও আগুন, পুড়ুক দামেস্ক! আর ফিরিব না—জগতের মুখ আর দেখিব না! জয়নালকে হারাইয়া শুধু প্রাণ লইয়া স্বদেশে যাইব না—এই প্রতিজ্ঞা। আজ গাজী রহ্‌মানের এই স্থির প্রতিজ্ঞা।”

 মোহাম্মদ হানিফা গাজী রহ্‌মানের বাক্যে সিংহগর্জ্জনের ন্যায় গর্জ্জিয়া উঠিলেন; আর আর মহারথিগণও ঐ উৎসাহবাক্যে দ্বিগুণ উৎসাহিত হইয়া “সাজ সমরে, সাজ সমরে” বলিতে বলিতে মুহুর্ত্তের মধ্যে প্রস্তুত হইলেন। ঘোর রোলে বাজনা বাজিয়া উঠিল। মোহাম্মদ হানিফা অসি, বর্ম্ম্ম, তীর, খঞ্জর, কাটারি প্রভৃতিতে সজ্জিত হইয়া দুলদুলে আরোহণ করিলেন। সৈন্যগণ সমস্বরে ঈশ্বরের নাম করিয়া শিবির হইতে বহিত হইল।

 সংবাদ-বাহকগণ এজিদ-সমীপে করজোড়ে নিবেদন করিল, “মহারাজ! মোহাম্মদ হানিফা বহুসংখ্যক সৈন্যসহ মহাতেজে শিবিরাভিমুখে আসিতেছেন। এক্ষণে উপায়? মন্ত্রীবর মারওয়ান শিবিরে নাই—সৈন্যগণও নিরুৎসাহ—যুদ্ধসাজের কোনই আয়োজন নাই।—কুফাধিপতির দুর্দ্দশায় সকলেই ভয়ে আতঙ্কিত, উৎসাহ উদ্যম কাহারও নাই। নৈরাশ্যের সহিত বিষাদ-মলিন রেখা সৈন্যগণের বদনে দেখা দিয়াছে।”

 এজিদ মহা ব্যস্ত হইয়া শিবির বহির্ভাগে গিয়া দেখিলেন প্রান্তরের প্রস্তররাশি চূর্ণ করিয়া, বালুকারাশি শূন্যে উড়াইয়া, অসংখ্য সৈন্য শিবির আক্রমণে আসিতেছে।

 এদিকে মন্ত্রীবর মারওয়ান ম্লানমূখ হইয়া উপস্থিত। সে বলিল—“জয়নাল বন্দীগৃহে নাই, নগরে নাই, বিশেষ সন্ধানে জানিলাম,—জয়নালের কোন সন্ধানই নাই। মহা বিপদ! চতুর্দ্দিকেই বিপদ, সম্মুখেও ঘোর বিপদ! মহারাজ! সেই ঘোষণা প্রকাশেই এই আগুন জ্বলিয়াছে। মোহাম্মদ হানিফার হঠাৎ শিবির আক্রমণ করিবার কারণ আর কিছুই নহে, ঐ ঘোষণা—জয়নালের প্রাণদণ্ডের ঘোষণা।

 এজিদ মহা ভীত হইয়া বলিলেন, “এক্ষণে উপায়? সৈন্যগণের মনের গত