পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চম প্রবাহ

 পথিক যাইতেছেন! মনে মনে বলিতেছেন, “হাঁ! ঈশ্বরের কি মহিমা! এক জয়নাব-রত্নের তিন প্রার্থী—এজিদ, আক্কাস্ আর মাননীয় হাসান! এজিদ ত পূর্ব্ব হইতেই জয়নাবের রূপে আত্মসমর্পণ করিয়া বসিয়া আছে! এজিদ যে দিন জয়নাবকে দেখিয়াছে, জয়নাবের অজ্ঞাতে যে দিন এজিদের নয়ন-চকোর জয়নাবের মুখচন্দ্রিমার পরিমল-সুধা পান করিয়াছে, সেই দিন এজিদ জয়নাবকেই মনঃপ্রাণ সমর্পণ করিয়া জয়নাবের রূপ-সাগরে আত্মবিসর্জ্জন করিয়াছে; জয়নাবকেই জপমালা করিয়া দিবানিশি জয়নাব নাম জপ করিতেছে। জয়নাব ধ্যান, জয়নাব জ্ঞান!—আক্কাস্ ত এত অর্থশালী, এমন রূপবান পুরুষ, তাহারও মন আজ জয়নাব-নামে গলিয়া গেল। এমাম হাসান —যাঁহার পদছায়াতেই আমাদের মুক্তি, যাঁহার মাতামহ প্রসাদাৎ আমরা এই অক্ষয় ধর্ম্মের সুবিস্তারিত পবিত্র পথ দেখিয়া পরম কারুণিক পরমেশ্বরকে চিনিয়াছি, যাঁহার ভক্তের জন্যই সর্ব্বদা স্বর্গের দ্বার বিমোচিত রহিয়াছে, এমন মহাপুরুষও জয়নাব লাভের অভিলাষী! অহো! জয়নাব কি ভাগ্যবতী?” পথিক মনে মনে এইরূপ নানা কথা আন্দোলন করিতে করিতে পথবাহন করিতে লাগিলেন। চিন্তারও বিরাম নাই, গতিরও বিশ্রাম নাই।

পঞ্চম প্রবাহ

 পতিবিয়োগে নারীজাতিকে চারি মাস দশ দিন বৈধব্যব্রত পালন করিতে হয়। সামান্য বস্ত্র পরিধান করিয়া নিয়মিতাচারে মৃত্তিকায় শয়ন করিতে হয়, সুগন্ধ-তৈল স্পর্শ, চিকুরে চিরুণী দান, মেহেদী কি অন্য কোন প্রকারের অঙ্গরাগ শরীরে লেপন,—যাহাতে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে, তাহার সমুদয় হইতে একেবারে বর্জ্জিত থাকিতে হয়। জয়নাবের বৈধব্যব্রত এখনও শেষ হয় নাই; তাহার পরিধানে মলিন বসন। (আব্‌রুহু, অর্থাৎ চক্ষু ও কর্ণের মধ্যস্থিত উভয় পার্শ্ব হইতে কপোল ও ওষ্ঠের নিম্ন দিয়া সমুদয় স্থানকে আব্‌রুহু কহে। এই আব্‌রুহু-স্থানে অপর পুরুষের চক্ষু পড়িলেই শাস্ত্রানুসারে মহাপাপ। স্ত্রীলোকের পদতলের উপরিস্থিত সন্ধিস্থান উলঙ্গ থাকিলেও মহাপাপ। সমুদয়