পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৯
উদ্ধার পর্ব্ব—ষড়্‌বিংশ প্রবাহ

আজ ভাল নয়। হানিফাকে কোন কৌশলে শান্ত করিতে পারিলে কাল দেবি। সৈন্যগণের হাবভাব দেখিয়া আজ আমি এক প্রকার হতাশ হইয়াছি।”

 মারওয়ান বলিল, “এইক্ষণে সে সকল কথা বলিবার সময় নহে, শত্রুগণ আগতপ্রায়। জয়নাল আবেদীন নগরে নাই, বন্দীগৃহে নাই, একথা প্রকাশ হইলে যে কথা—শূলে চড়াইয়া তাহার প্রাণবধ করিলেও সেই কথা। এখন এই উপস্থিত আক্রমণ হইতে রক্ষার উপায় করাই আবশ্যক। বিপক্ষদলের যেরূপ রুদ্রভাব, উগ্রমূর্ত্তি দেখিতেছি, ইহাতে কি যে ঘটিবে বুঝিতেছি না; কিন্তু আমরা চেষ্টার ত্রুটি করিব না।”

 মারওয়ান তখনই সন্ধিসূচক নিশান উড়াইয়া দিল এবং জনৈক বিশ্বাসী দূতকে কয়েকটি কথা বলিয়া সেই বীরশ্রেষ্ঠ বীরগণের সম্মুখে প্রেরণ করিল।

 মোহাম্মদ হানিফা এবং তাহার অপর অপর আত্মীয়গণ দূতের প্রতি একযোগে অসি উত্তোলন করিয়া বলিলেন, “রাখ্ তোর সন্ধি! রাখ্ তোর সাদা নিশান!”

 গাজী রহ্‌মান ত্রস্তে মোহাম্মদ হানিফার সম্মুখীন হইয়া বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার। ক্ষান্ত হউন। পরাজিত শত্রু মহাবীরের বধ্য নহে— বিশেষতঃ দূত! রোষপরবশ হইয়া রাজবিধি রাজপদে দলিত করিবেন না। অস্ত্র কোষে আবদ্ধ করুন। দূতবরের প্রার্থনা শুনিতেই হইবে, গ্রাহ্য করা না করা বাদশাহ্-নামদারের ইচ্ছা।”

 হানিফা লজ্জিত হইয়া হস্ত সঙ্কুচিত করিলেন; তরবারি পিধানে রাখিয়া বলিলেন, “গাজী রহ্‌মান! তুমি যথার্থই আমার বুদ্ধিবল। দুর্দ্দমনীয় ক্রোধই লোকের মূর্খতা প্রকাশ করে—মানুষকে নিন্দার ভাগী করে। যাহা হউক, তুমি দূতবরের সহিত কথা বল।”

 এজিদ-দূত মহাসমাদরে মোহাম্মদ হানিফাকে অভিবাদন করিয়া বলিল, “জয়নাল আবেদীনকে শূলে চড়াইয়া বধ করিবার ঘোষণা রহিত করা গেল, শূলদণ্ড এখনই উঠাইয়া ফেলা হইবে। আমাদের সৈন্যগণ মহাক্লান্ত—বিনা যুদ্ধেই আজ আমরা পরাজয় স্বীকার করিলাম। যদি ইহাকেই আপনারা জয় মনে করেন, তবে মহারাজ এজিদ তাঁহার হস্তস্থিত তরবারি যাহা সত্যসত্যই