পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪০০

তিনি ভূমিতে রাখিয়া দিয়াছেন, আর তাহা হস্তে স্পর্শ করিবেন না। এবং গলায় কুঠার বাঁধিয়া আগামী কল্য তিনি আপনার শিবিরে উপস্থিত হইয়া আত্মসর্পণ করিবেন।”

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “যদি জয়নাল আবেদীনের প্রতি কোনরূপ অত্যাচার না হয় এবং তাহার প্রাণের প্রতিভু মহারাজ এজিদ হয়েন, তবে আমরা আজিকার মত কেন—যতদিন তিনি যুদ্ধ ক্ষান্ত রাখিতে ইচ্ছা করেন, ততদিন পর্য্যন্ত সম্মত আছি। বিনা যুদ্ধে, কি দৈববিপাকে, কি অপ্রস্তুতজনিত, কি অপারগতা হেতু পরাভব-স্বীকার করিলে, আমরা তাহাকে জয় মনে করি না। যে সময় তোমাদের তরবারির তেজ কম হইবে,—সমর-প্রাঙ্গণ হইতে প্রাণভয়ে তোমরা পলাইতে থাকিবে, শৃগাল-কুকুরের ন্যায় তোমাদের তাড়াইতে থাকিব,কোথায় নিশান, কোথায় ব্যুহ, কোথায় কে, কে স্বপক্ষ, কে বিপক্ষ ইত্যাদির জ্ঞান থাকিবে না, রক্তস্রোতে রঞ্জিতদেহ সকল ভাসিয়া যাইবে, কোন স্থানে তোমাদের সৈন্য-দেহখণ্ড খণ্ডিত অশ্ব-দেহের শোণিতসংঘোগে জমাট বাঁধিয়া গড়াইতে থাকিবে, কোন স্থানে বা দ্বীপাকার ধারণ করিবে, শিরশূন্য কবন্ধসকল রক্তের ফোয়ারা ছুটাইয়া নাচিতে নাচিতে হেলিয়া দুলিয়া শবদেহের উপর পড়িয়া হাত-পা আছড়াইতে থাকিবে, আমরা বীরদর্পে বিজয়নিশান উড়াইয়া দামেস্ক-রাজপাটে জয়নাল আবেদীনকে বসাইয়া রক্তমাখা শীরে রঞ্জিত তরবারিসকল মহারাজ জয়নাল আবেদীনের সম্মুখে রাখিয়া ‘মহারাজাধিরাজ’ সম্ভাষণে নতশিরে দণ্ডায়মান হইব,—তোমাদের মধ্যে যদি কেহ জীবিত থাকে তবে সেও আমাদের সহিত ঐ অভিষেক-ক্রিয়ায় যোগদান করিবে, নগরময় যখন অর্দ্ধচন্দ্র আর পূর্ণতারকা-চিহ্নিত পতাকাসকল উড়িতে থাকিবে, দুতবর! সেই দিন যথার্থই জয়ী হইলাম মনে করিব। অন্য প্রকার জয়ের আশা আমাদের অন্তরে নাই। যাও দূতবর, তোমার রাজাকে গিয়া বল আমরা যুদ্ধে ক্ষান্ত দিলাম। যে দিন তোমাদের সমর-নিশান শিবির-শিরে উড়িতে দেখিব,—ভেরীর বাজনা স্বকর্ণে শুনিব, সেই দিন আমাদের তরবারির চাকচিক্য, তীরের গতি, বর্শার চালনা, অশ্বের দাপট, নিশানের ক্রিয়া— সকলই দেখিতে পাইবে। আজ ক্ষান্ত দিলাম, কিন্তু পুনরায় বলিতেছি: