পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০১
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তবিংশ প্রবাহ

জয়নালের প্রাণ তোমাদের রাজার প্রতিভূতে রহিল। যাও দূতবর! শিরিয়ে যাও, আমরাও শিবিরে চলিলাম।”

সপ্তবিংশ প্রবাহ

 রজনী দ্বিপ্রহর। তিথির পরিভাগে বিধুর অমুদয়, কিন্তু আকাশ নক্ষত্র মালায় পরিশোভিত। মহাকোলাহলপূর্ণ রণ-প্রাঙ্গণ এইক্ষণে সম্পূর্ণভাবে নিস্তব্ধ। দামেস্ক-প্রান্তরে প্রাণীর অভাব নাই। কিন্তু প্রায় সকলেই নিদ্রার কোলে অচেতন। জাগ্রত কে?—প্রহরী দল, সন্ধানীদল, আর উভয় পক্ষের মন্ত্রীদল! মন্ত্রীদলমধ্যেও কেহ কেহ আলস্যের প্রভাবে চক্ষু মুদিয়া চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া আছেন, কেহ দিবাভাগের সেই অভাবনীয় ঘটনার কোন কোন অংশ ভাবিয়া উপবেশন-স্থানেই গড়াইয়া পড়িয়াছেন, কেহ শয়ন-শয্যার এক পার্শ্বে পড়িয়া আধ-জাগরণে, আধ-স্বপ্নে জেয়াদের শিরশূন্য দেহ দেখিয়া চমকাইয়া উঠিতেছেন। যথার্থ জাগরিত কে?—এক পক্ষে মারওয়ান, অন্য পক্ষে গাজী রহ্‌মান।

 মারওয়ান আপন নির্দ্দিষ্ট বস্ত্রাবাসের বহির্দ্বারে সামান্য কাষ্ঠাসনোপরি উপবেশন করিয়া বলিতেছে, “ভাবিলাম কি? ঘটিল কি? এখন উপায়ই বা কি? রাজ্যরক্ষা, রাজার জীবন রক্ষা, নিজের প্রাণ রক্ষার উপায় কি? কি ভ্রম! কি ভয়ানক ভ্রম!! আশা ছিল শত্রুকে শূলে দিয়া জগতে নাম জাঁকাইব—যুদ্ধে জয়লাভ করিব;—সে আশা-বারিধি গাজী রহ্‌মানের মস্তিষ্ক তেজে, ছদ্মবেশী বাহ্‌রামের বাহুবলে এবং ওমর আলীর কৌশলে একেবারে পরিশুষ্ক হইয়া গিয়াছে। এখন জীবনের আশঙ্কা, রাজ-জীবনে সন্দেহ। জয়নাল আবেদীনের বন্দী-গৃহ হইতে পলায়নে আরও সর্ব্বনাশ ঘটিল। দ্বারে দ্বারে প্রহরী, নগর-প্রবেশের দ্বারে প্রহরী, বহির্দ্বারে প্রহরী। সকল প্রহরীর চক্ষে ধূলি দিয়া আপন মুক্তি সে আপনিই করিল। কি আশ্চর্য্য কাণ্ড! এখন আর কাহার জন্য যুদ্ধ? আর কি কারণে হানিফার সহিত শত্রুতা? কেন প্রাণীক্ষয়? জয়নালকে হানিফা-হস্তে দিতে না পারিলে