পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৫
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তবিংশ প্রবাহ

কি না; এখন মুল কথা—জয়নাল আবেদীন। যুদ্ধ করিতে হইলেও জয়নাল! পরাভব স্বীকার করিয়া প্রাণরক্ষা—রাজ্যরক্ষা করিতে হইলেও জয়নাল। সন্ধির প্রস্তাব করিতে হইলেও সেই জয়নাল! জয়নালের সন্ধান না করিয়া আর কোন কথা উঠিতে পারে না। জীবনে, মরণে সকল অবস্থাতেই জয়নালের প্রয়োজন।”

 “তাহা ত শুনিলাম। কিন্তু একটি কথা—এই নিশীথ সময়ে জয়নালের সন্ধান করিতে, কি বিপক্ষ-শিবিরে সন্ধান জানিতে যাইব?—তাহাতে কৃতকার্য্য হইতে পারিব কি না, সে বিষয়ে একটু চিন্তা করিতে চাই। ছদ্মবেশ ধারণ করিয়া পথিক, পরিব্রাজক, দীন-দুঃখীর পরিচয় দিলেই যে কার্য্যসিদ্ধি হয়, তাহা নহে। এ মদিনার মায়মুনা নহে, দগ্ধ-হৃদয় জাএদা নহে। এ বড় কঠিন হৃদয়, বৃহৎ মস্তক। এ মস্তকে মজ্জার ভাগও অতি অধিক, শক্তিও বেশী পরিমাণ, ক্ষমতাও অপরিসীম। প্রত্যক্ষ প্রমাণ ত অনেক দেখিতেছি, আবার এই নিশীথ সময়ে ছদ্মবেশে গোপনভাবে দেখিয়া অধিক আর কি লাভ হইবে? তাহাদের গুপ্তসন্ধান জানিয়া সাবধান ও সতর্ক হওয়া, কি কোন কার্য্যের প্রতিযোগিতা করা, কি নূতন কার্য্যের অনুষ্ঠান করা, বহু দূরের কথা। শত্রু-শিবিরের বহিঃস্থ সীমার নিকট যাইতে পার কি না সন্দেহ। তোমার ইচ্ছা হইয়াছে—চল, দেখিয়া আসি, গাজী রহমানের সতর্কতাও জানিয়া আসি; কিন্তু লাভ কিছু হইবে না, বরং বিপদের আশঙ্কাই অধিক।”

 “লাভের আশা যাহা পূর্ব্বেই বলিয়াছি; সে যে ঘটিবে না, তাহাও বুঝিয়াছি। তথাপি যদি কিছু পারি।”

 পারিবে ত অনেক। মানে মানে ফিরিয়া আসিতে পারিলে রক্ষা।”

 “আচ্ছা, দেখাই যাউক, আমাদের ত রাজ্য!”

 “আচ্ছা, আমি সম্মত আছি।”

 “তবে আর বিলম্ব কি? পোষাক লও।”

 “পোষাক ত লইবই, আরও কিছু লইব।”

 “সাবধান। কেহ যেন হঠাৎ দেখিতে না পায়।

 ওত্‌বে অলীদ ছদ্মবেশে মারওয়ানের সঙ্গে চুপে চুপে বাহির হইল।