শিবিরে যা করিতেছে। যে উদ্দেশে আসিয়াছিলাম, তাহা ত ঘটিল না। এখন নিরাপদে শিবিরে ফিরিতে পারিলেই রক্ষা।”
“সে কথা ত আমি আগেই বলিয়াছি। এখন লাভের মধ্যে প্রাণ লইয়া টানাটানি।”
মারওয়ান বলিল, “আর কথা বলিও না; এস, চুপে চুপে নিঃশব্দে চলিয়া যাই।”
উভয়ে কিছু দুর আসিয়া “রক্ষা পাইলাম” বলিয়া দাঁড়াইল। চুপি চুপি কথা কহিতে, আর তাহাদের সাহস হইল না—পারিলও না। কণ্ঠতালু শুষ্ক, জিহ্বা একেবারে নীরস,—তবুও বহুদূর তাহারা আসিয়া পড়িয়াছে। ক্ষণকাল পরে মারওয়ান একটু স্থির হইয়া বলিল, “অলীদ। বাঁচিলাম। চল, এখন একটু স্থির হইয়া আমাদের শিবিরে যাই।”
মুখের কথা শেষ হইতেই পশ্চাৎ দিক হইতে বজ্রনাদে শব্দ হইল— “সাবধান! আর কথা বলিও না, চলিয়া যাও। ঐ বৃক্ষ—ঐ তোমাদের সম্মুখের ঐ উচ্চ খর্জ্জুরবৃক্ষ পর্য্যন্ত আমাদের সীমা। নির্দ্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকিতে পারিবে না। যদি প্রাণ বাঁচাইতে চাও, সীমার বাহিরে যাও।”
কি করে, উভয়ে দ্রুতপদে সীমা-বৃক্ষ পার হইয়া রক্ষা পাইল। আর কোন কথা শুনিল না। জীবনে এমন অপমান কখনও হয় নাই। কি লজ্জা!
মারওয়ান বলিল, “কি বিপদ! হানিফার প্রহরীরা কি প্রান্তরের চতুষ্পার্শ্ব ঘিরিয়া রহিয়াছে? এখনও আমার মন কিছুতেই সুস্থির হয় নাই, এখনও হৃদয়ের চঞ্চলতা দূর হয় নাই। এখানে আর দাঁড়াইব না। এখনও সন্দেহ হইতেছে। আমাদের দেশ, আমাদের রাজ্য, সীমা-বৃক্ষ উহাদের—কি আশ্চর্য্য। সীমা-বৃক্ষ না ছাড়াইয়া আসিলে জীবন যায়—কি ভয়ানক ব্যাপার। চল শিবিরে যাই।”
উভয়ে নীরবে আপন শিবিরাভিমুখে চলিল। যাইতে যাইতে সম্মুখে একখণ্ড বৃহৎ শিলাখণ্ড দেখিয়া মারওয়ান বলিল, “অলীদ। এই শিলাখণ্ডের উপরে একটু বিশ্রাম করি। নানা কারণে মন অস্থির হইয়াছে।