পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৩
উদ্ধার পর্ব্ব—অষ্টাবিংশ প্রবাহ

ফিরিতেছে না, ইহাই বা কারণ কি? আর যে দুইটি ছদ্মবেশীর কথা শুনিলাম, তাহারা শিবিরের দিকে আসিতেছিল, প্রহরীদিগের সতর্কতায় কৃতকার্য্য হইতে পারে নাই।—দুই তিনবার চেষ্টা করিয়াও শিবিয়ের বহির্ভাগ রেখার নিকটে আশা দুরে থাকুক, সহস্র হস্ত ব্যবধান হইতে ফিরিয়া গিয়াছে। ইহারাই বা কে? বিশেষ গোপন ভাবে চরদিগকে, শেষে পঞ্চবিংশতি আম্বাজী সৈন্যকেও পাঠাইয়াছি। তাহারাই বা কি করিল? মন্ত্রিপ্রবর এই সকল বিষয় চিন্তা করিতে করিতে শিবির অভ্যন্তরস্থ তৃতীয় দ্বার পর্য্যন্ত আসিয়া সর্ব্বপ্রধান দ্বারী মালিককে জিজ্ঞাসা করিলেন: কোন সংবাদ জানিতে পারিয়াছ?

 মালিক বলিল, “আমি এ পর্য্যন্ত কোন সংবাদ পাই নাই।”

 মন্ত্রিবর মৃদুমন্দপদে চতুর্থ দ্বার পর্য্যন্ত যাইয়া সাদ্‌কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোন সংবাদ নাই?”

 সাদ্ জোড়করে বলিল, “আমি যে সংবাদ পাইয়াছি, তাহা বিশেষ প্রয়োজনীয় নহে বলিয়া জানাই নাই।”

 “কি সংবাদ?”

 “শিবির-বহির্দ্বারের চন্দ্ররেখা পর্য্যন্ত শাহ্‌বাজের পাহারায় আছে। তাহার কিছু দূরেই সীমা-নির্দ্দিষ্ট খর্জ্জুর বৃক্ষ। সেই বৃক্ষের দুরে স্তূপাকার শিলাখণ্ডোপরি সেই দুইটি লোক অস্ফুটস্বরে কি আলাপ করিতেছিল। অনুমানে বোধ হয়, তাহারা কোনরূপ দুরভিসন্ধিতেই আসিয়াছিল।”

 মন্ত্রির আরও চিন্তিত হইলেন। ক্রমে শিবির বহির্দ্বার পর্য্যন্ত যাইয়া দাঁড়াইতেই সুদক্ষ প্রহরী আবদুল কাদের করজোড়ে বলিল, “শিলাসমষ্টির নিকটে যে দুইজন ছদ্মবেশী বসিয়াছিল, তাহাদের সঙ্গে আর একজন আসিয়া মিশিয়াছে। এ সকল সংবাদে কোন বিশেষ সারত্ব নাই বলিয়া চরেরা পুনরায় সেইস্থানে গিয়াছে।”

 উভয়ে এই কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দামেস্ক-নগরে প্রেরিত গুপ্তচর দ্বারে প্রবেশ করিয়াই মন্ত্রিবরকে দেখিয়া নতশিরে অভিবাদনপূর্ব্বক বলিল, “আজ বড় ভয়ানক সংবাদ শুনিতে হইয়াছে। জয়নাল আবেদীন বন্দী