পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪১৪

গৃহে নাই। এজিদের আজ্ঞায় মারওয়ান জয়নাল আবেদীনকে ধরিয়া আনিতে গিয়াছিল, না পাইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে। দামেস্ক-নগরে ঘরে ঘরে এজিদের সন্ধানী লোক ফিরিতেছে; রাজপথ, গুপ্তপথ, দীন-দরিদ্রের কুটীর তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া বেড়াইতেছে। জয়নাল আবেদীন কোথায় গিয়াছেন, তাহার কোন সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না।”

 এ সংবাদ শুনিয়া গাজী রহ্‌মান একেবারে নিস্তব্ধ হইলেন। বহু চিন্তায় পর সাব্যস্ত হইল: জয়নাল আবেদীন নগর হইতে বাহির হইয়াছেন, সন্দেহ নাই। শত্রুহস্তেও তিনি পতিত হন নাই। কিন্তু আশঙ্কা অনেক। এই অভাবনীয় সংবাদে মন্ত্রীপ্রবরের মস্তক ঘুরিয়া গেল; মস্তিষ্কের মজ্জা চিন্তাশক্তির অপরিসীম বেগে অধিকতর আলোড়িত হইয়া বিন্দু বিন্দু ঘর্ম্মবিন্দুতে ললাট পরিশোভিত হইল।

 একজন গুপ্তচর আসিয়া সেই সময় বলিতে লাগিলেন, “সেই নিশাচর শিলাখণ্ডে বসিয়া আলাপ করিতেছিল, কোন স্পষ্ট কথাই বুঝা যাইতে ছিল না। কেবল ‘মদিনা’ ‘চতুর’ ‘ফিরিয়া যাই’ এই তিনটি কথা বুঝা গিয়াছিল! ইতিমধ্যে আর একজন লোক হঠাৎ সেইখানে উপস্থিত হইলেই উহারা যেন ভয়ে ভীত হইয়া গাত্রোত্থান করিল। আগন্তুক জিজ্ঞাসা করিল, “তোমরা কে?” তাহাতে তাহারা উত্তর করিল—“আমরা পথিক।” পুনরায় প্রশ্ন—“পথিক এ পথে কেন?” উত্তর—“পথ ভুলিয়া।” আবার প্রশ্ন—“কোথায় যাইবে? উত্তর—“দামেস্ক নগরে।” “কি আশা?” —“চাকুরী।” “বসতি কোথায়?—“মদিনা।” অমনি চতুর্দ্দিক হইতে শব্দ হইল, “আর কোথায় যাইবি?” “মদিনার লোক চাকুরীর জন্য দামেস্কে?” দেখিতে দেখিতে আম্বাজী গুপ্ত সৈন্যগণ বর্শাহস্তে তিন জনকেই ঘিরিয়া ফেলিল, পঞ্চবিংশতি বর্শা-ফলক তাহাদের বক্ষ এবং পৃষ্ঠে উত্থিত হইয়া তিন জনকেই বন্দী করিল। সৈন্যগণ বলিল, প্রভাতে পরিচয়—পরীক্ষার পর মুক্তি।”

 মন্ত্রিবর এই সকল কথা মনোযোগের সহিত শুনিয়া আদেশ করিলেন এখনই আরও শত বর্শাধারী সৈন্য লইয়া ভিন্ন ভিন্ন পথে ঐ বন্দী তিনজনকে বিশেষ সতর্কতার সহিত আনিয়া তিন স্থানে আবদ্ধ কর।