ঊনত্রিংশ প্রবাহ
মদ্যপায়ীর সুখে দুঃখে সমান ভাব। সকল অবস্থাতেই মদের প্রয়োজন। মনকে প্রফুল্ল করিতে, মনের দুঃখ দূর করিতে,—মনে কিছুই নাই অর্থাৎ কালি নাই, বালি নাই, ময়লা নাই, একেবারে সাদা—সে সময়ও মদের প্রয়োজন। গগনে শুকতারা দেখা দিয়াছে—প্রভাত নিকটে। এজিদের চক্ষে ঘুম নাই। ক্রমে পেয়ালা পূর্ণ করিতেছেন, উদরে ঢালিতেছেন। কিছুতেই তাঁহার মন প্রফুল্ল হয় না এবং তিনি আনন্দও পান না—মনের চিন্তাও দূর হয় না। ঐ কথা—ঐ ওমর আলীর নিষ্কৃতির কথা—জয়নালের নিরুদ্দেশের কথা, মধ্যে মধ্যে আবদুল্লাহ্ জেয়াদের খণ্ডিত-শিরের কথা মনে পড়িতেছে, পেয়ালাও চলিতেছে। ক্রমেই চিন্তার বেগবৃদ্ধি এবং পূর্ব্ব কথার স্মরণ। প্রথমে সূচনা, পরে অনুতাপের সহিত চক্ষের জল। আবার পাত্র পরিপূর্ণ হইল। এজিদ পাত্র হস্তে করিয়া একটু চিন্তার পর উদরে ঢালিলেন—জ্বলন্ত হৃদয় জ্বলিয়া উঠিল, মনের গতির মুহূর্ত্তে পরিবর্ত্তন হইল,—মুখে কথা ফুটিল। “কেন হেরিলাম? সে জ্বলন্ত রূপরাশির প্রতি কেন চাহিলাম? হায়! হায়!! সেই এক দিন, আর আজ এক দিন! কি প্রমাদ! প্রেমের দায়ে কি না ঘটিল! কত প্রাণ —ছিঃ ছিঃ! কত প্রাণের বিনাশ হইল। উঁহু! কি কথা মনে পড়িল! সে নিদারুণ কথা কেন এখন মনে হইল! আমি সীমার-রত্ন হারাইয়াছি, অকপট মিত্র জেয়াদ-ধনে বঞ্চিত হইয়াছি। এখন মারওয়ান, ওত্বে অলীদ, ওমর—এই তিন রত্ন জীবিত। কিন্তু শত্রুমুখে বক্ষবিস্তার করিয়া দাঁড়ায় কে? ওমর বৃদ্ধ, মারওয়ান বাক্চাতুরিতে পক্ক, বুদ্ধি-চালনায় অদ্বিতীয়, অস্ত্রচালনায় একেবারে গণ্ডমূর্খ। বল, ভরসা—একমাত্র ওত্বে অলীদ। অলীদেরও পূর্ব্বের ন্যায় বলবিক্রমও নাই, সে মস্হাব কাক্কার নামে কম্পমান্। কাক্কার নাম শুনিলে সে কি আর যুদ্ধে যাইবে? যুদ্ধ কিসের?—কার জন্য যুদ্ধ?—এ যুদ্ধ করে কে?—কি কারণে যুদ্ধ? জয়নাল আবেদীন কোথায়—এ কথার উত্তর কি?”