পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২১
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

দাও। আজ হানিফার প্রাণবধ না করিয়া ছাড়িব না। এখনই যুদ্ধনিশান উড়াইয়া রণভেরী বাজাইয়া দাও।

 ওমর অভিবাদন করিয়া বিদায় হইল। “কেবল অস্ত্র লইতে বিলম্ব”—এই বলিয়া এজিদ ওমরকে বিদায় দিলেন। কিন্তু সুরার মোহিনীশক্তি তাঁহাকে শয্যায় শায়িত করিল। সুরে! অপাত্রের হস্তে পড়িয়া দুর্ণামের ভাগী হইলে, কুখ্যাতির ধ্বজা উড়াইলে, অতি তুচ্ছ হেয় বলিয়া ভদ্র-সমাজে অস্পৃশ্য হইলে। দশবার বলিব, তোমারই কল্যাণে, তোমারই কুহকে, মহারাজ এজিদ যুদ্ধসাজে সজ্জিত না হইয়া শয্যাশায়ী হইলেন। যুদ্ধের আয়োজনই বা কি চমৎকার। সুরে! তোমারই প্রসাদে আজ এজিদের এই দশা! তুমি দূর হও, বীরের অন্তর হইতে দূর হও,—জগতের মঙ্গলাকাঙ্খীর চিত্ত হইতে দূর হও,—সংসারীর নয়ন-পথ হইতে দূর হও—দুর হও—তুমি দূর হও! জগৎ হইতে দূর হও!!

ত্রিংশ প্রবাহ

 তমোময়ী মিশা, কাহাকেও হাসাইয়া, কাহাকেও কাঁদাইয়া, কাহারও সর্ব্বনাশ করিয়া যাইবার সময় স্বাভাবিক হাসিটুকু হাসিয়া চলিয়া গেল। মোহাম্মদ হানিফার শিবিরে ঈশ্বর-উপাসনার ধূম পড়িয়া গেল। নিশার গমন, দিবাকরের আগমন—সেই সংযোগে বা শুভসন্ধি সময়ে, সকলের মুখেই ঈশ্বরের নাম—সেই অদ্বিতীয় দয়াল প্রভুর নাম—নূরনবী মোহাম্মদের নাম সহস্র প্রকারে সহস্র মুখে। নিশার ঘটনা, নিশাবসান না হইতেই গাজী রহ্‌মান প্রধান প্রধান যোদ্ধা ও মোহাম্মদ হানিফার নিকট আদ্যন্ত বিস্তৃত করিয়াছেন। সকলেই বন্দীগণকে দেখিতে সমুৎসুক।

 আজ প্রত্যুষেই দরবার। আড়ম্বর রাজদরবারে সম্পূর্ণ ভ্রাতৃভাব —ভ্রাতৃ-ব্যবহার। পদগৌরবে কেহই গৌরবান্বিত নহেন—সকলেই ভাই, সকলেই আত্মীয়, সকলেই সমান। ক্রমে ক্রমে সকলেই আসিলেন।