পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪২৬

পরিবর্ত্তনে একটু সন্দেহ হইয়াছে মাত্র। বন্দীর গাত্রের বসন উন্মোচন করিতে আজ্ঞা করুন। আমার নিশ্চয় বোধ হইতেছে, এই বন্দী এজিদের প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান। কাল অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত ইহার সহিত আমার অনেক কথা হইয়াছে, হাসি-তামাসা করিতেও বাকী রাখি নাই।”

 গাজী রহ্‌মানের ইঙ্গিতে প্রহরিগণ মারওয়ানের সেই ছদ্মবেশ উন্মোচন করিতেই মহামুল্য মণিমুক্তা-খচিত বেশের প্রতি সকলের দৃষ্টি পড়িল। ওমর আলী, আক্কেল আলী (বাহ্‌রাম) প্রভৃতি যাঁহারা বিশেষরূপে মারওয়ানকে চিনিতেন, তাঁহারা সমস্বরে বলিয়া উঠিলেন,—“মারওয়ান!—এই সেই মারওয়ান!”

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “কি ঘৃণার কথা। সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সচিবের এই দশা। মারওয়ানের মন এত নীচ! বড়ই দুঃখের বিষয়। ইহার সম্বন্ধে আর কেহ কোন কথা বলিবেন না। দেখি, তৃতীয় বন্দীর সত্যবাদিতা এবং এই মারওয়ান সম্বন্ধে তিনিই বা কি জানেন। এক্ষণে ইহাকে সভার এক প্রান্তে বিশেষ সতর্কভাবে রাখিতে হইবে।”

 মন্ত্রিবরের আদেশে মারওয়ান বন্ধন-দশায় প্রহরী-বেষ্টিত হইয়া সভার এক প্রান্তে রহিল।

 এদিকে তৃতীয় বন্দী সভায় উপস্থিত হইলেন। তিনি কাহারও প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন না। প্রহরিগণ যে দিকে লইয়া চলিল, তিনি সেই দিকেই ঈশ্বরের নাম লইয়া চলিলেন। প্রহরিগণ তাঁহাকে গাজী রহ মানের সম্মুখে লইয়া উপস্থিত করিল।

 জয়নাল আবেদীনকে দেখিয়া দরবারের যাবতীয় লোকের মনে যে এক অনির্ব্বচনীয় ভাবের উদর হইল, সে ভাবের কথা কে বলিবে? সে কথা কে মুখে আনিবে? শত্রুর জন্য মন আকুল, এ কথা কে বলিবে? সকলের মনেই-ঐ ভাব—ঐ স্নেহপূর্ণ পবিত্রভাব—কিন্তু মনের কথা মন খুলিয়া মুখে বলিতে কেহই সাহসী হইলেন না। মোহাম্মদ হানিফা জয়নালের মুখাকৃতি স্থির নয়নে দেখিতে লাগিলেন। কত কথা তাঁর মনে উদয় হইল। বন্দীর মুখাকৃতি, শরীরের গঠন দেখিয়া ভ্রাতৃবর