পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪২৮

 মারওয়ান বন্দী অবস্থাতেই বলিল, “আমি সশস্ত্র থাকিয়াই বা কি করিলাম। কি ভ্রম! কি ভ্রম!! সুযোগ সুবিধামত তোমাকে পাইয়াও যখন আমার এই দশা, তখন আর আশা কি? কি ভ্রম!”

 “ওরে নরাধম! ঈশ্বর কি না করিতে পারেন, তাঁহার ক্ষমতা তুই কি বুঝিবি পামর?”

 “আমি বুঝি বা না বুঝি, মনের দুঃখ মনেই রহিয়া গেল। যদি চিনিতাম যে তুমিই—”

 সভাস্থ সকলে মহা চঞ্চলচিত্ত হইয়া উঠিতেই গোলযোগের সম্ভাবনা দেখিয়া জয়নাল আবেদীন বলিতে লাগিলেন, “সভাস্থ মহোদয়গণ। আমার পরিচয়—”

 “আমার পরিচয়” এই দুইটি শব্দ জয়নালের মুখ হইতে বহির্গত হইতেই সকলে নীরব হইলেন। সকলেই সমুৎসুকে জয়নালের মুখপানে চাহিয়া রহিলেন,

 জয়নাল বলিলেন, “আমরা এক সময়ে বন্দী—অথচ পরস্পর শত্রুভাব, ইহা কম আশ্চর্য্যের কথা নহে। অগ্রে এই পাপাত্মার পরিচয় দিয়া শেষে আমার কথা বলিতেছি। ইহার নাম জগৎরাষ্ট্র। এই পাপাত্মার মন্ত্রণাতেই মহাত্মা হাসানবংশের একেবারে বিনাশ! প্রভু হোসেনের বংশও সমূলে ধ্বংস হইবার উপক্রম হইয়াছিল, ঈশ্বর রক্ষা করিয়াছেন। সে কথা এই দুরাচার নিজমুখে স্বীকার করিয়াছে।—“কি ভ্রম? কি ভ্রম!!” ঐ ভ্রমই মঙ্গলের মুল কারণ। এই নরাধমই সকল ঘটনার মূল। সেই সকল সাংঘাতিক ঘটনার বিষয় যাহা আমি মাতার নিকট শুনিয়াছি, আর যাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, সংক্ষেপে বলিতেছি। আমি আপনাদের নিকট বিচারপ্রার্থী।

 সভাস্থ সকলে বিশেষ মনোযোগের সহিত শুনিতে লাগিলেন। জয়নাল গম্ভীর স্বরে বলিতে লাগিলেন, “এই নরাধম, এই পাপাত্মাই এজিদ-পক্ষ হইতে আপন নাম স্বাক্ষর করিয়া মহাত্মা হাসানের নিকট মক্কা-মদিনার কর চাহিয়া পাঠাইয়াছিল। এই পামরই হাসানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে, পবিত্রভূমি মদিনার স্বাধীনতাসূর্য্য হরণ করিয়া চির পরাধীনতার অন্ধকার অমানিশায় আবদ্ধ