এদিকে মহাঘাের নিনাদে যুদ্ধ-বাজনা বাজিয়া উঠিল। সৈন্যগণ, সৈন্যাধ্যক্ষগণ মনের আনন্দে সজ্জিত হইয়া শিবির-বহির্ভাগে দণ্ডায়মান হইলেন। ওমর আলী, মস্হাব কাক্কা প্রভৃতি মনােমত বেশভূষায় ভূষিত ও নানা অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া জয়নাল আবেদীনকে ঘিরিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। তখন মােহাম্মদ হানিফা বলিতে লাগিলেন, “ভ্রাতৃগণ! আজ সকলকেই ভ্রাতৃ সম্বােধনে বলিতেছি: আমাদের বংশের সমুজ্জ্বল রত্ন এমাম-বংশের মহামুল্য মণি, মদিনায় রাজা প্রাণাধিক জয়নাল আবেদীনকে ঈশ্বর কৃপায় আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি। ভবিষ্যৎ ভাবনা, জয়নালের জীবনের আশঙ্কা সদাচিন্তিত অন্তর হইতে দূর হইয়া এক্ষণে বিশেষ আশার সঞ্চার হইয়াছে। এ নিদারুণ দুঃখ-সিন্ধু হইতে শীঘ্রই উদ্ধার পাইবার ভরসাও হৃদয়ে জন্মিয়াছে। আজ হৃদয়ে মহাতেজ প্রবেশ করিয়াছে, আনন্দে বক্ষ স্ফীত হইয়া বাহুদ্বয় মহাবলে বলীয়ান বােধ হইতেছে। ভ্রাতৃগণ! আমাদের পরিশ্রম সার্থক হইল। আমি দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, প্রকৃতি আজ আমাদের সানুকূলে থাকিয়া অলক্ষিতভাবে নানাবিধ শুভ চিহ্ন, শুভযাত্রার শুভ লক্ষণ দেখাইতেছেন। নিশ্চয় আশা হইতেছে যে, এই যাত্রায় এজিদ-বধ করিয়া পরিজনবর্গকে বন্দীগৃহ হইতে উদ্ধার করিতে পারিব। ভ্রাতৃগণ, এই শুভ সময়ে, এই আনন্দোচ্ছ্বাস সময়ে আমার একটি মনােবাঞ্ছা পূর্ণ করি, জগৎপৃজিত মদিনার সিংহাসন আজ সঞ্জীব করি। আমাদের সকলের নয়নের পুত্তলি, জগতের যাবতীয় মােস্লেম চক্ষের পুত্তলি, হৃদয়ের ধন, অমুল্য মণিকে আমরা ভক্তির সহিত আজই শিরে ধারণ করি। ভ্রাতৃগণ! মনের হর্ষে প্রাণাধিক জয়নাল আবেদীনকে আজই এই স্থানে—এই দামেস্ক-প্রান্তরে মদিনার রাজপদে অভিষিক্ত করি।”
সমস্বরে সম্মতিসূচক আনন্দ-ধ্বনির প্রতিধ্বনিতে গগন আচ্ছন্ন করিল। মােহাম্মদ হানিফা ‘বিসমিল্লাহ’ বলিয়া রাজমুকুট, মণি-মুক্তাখচিত তরবারি জয়নাল আবেদীনের সম্মুখে রাখিয়া দিলেন। ওমর আলী, মস্হাব কাক্কা, গাজী রহ্মান প্রভৃতি যথারীতি অভিবাদন করিয়া ঈশ্বরের