পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৩৪

মুহুর্ত্তে জাগিতে থাকে—মহাত্মা হাসান-হোসেন পরিজনগণের উদ্ধারসাধন করিতে জীবন পণ,—দামেস্করাজ্য সমভূমি করিতে জীবন পণ!”

 “ভ্রাতৃগণ! মনে কর, আজ আমাদের জীবনের শেষ দিন এবং শেষ সময়। শত্রুদল চক্ষে দেখা ভিন্ন আপন সহযোগী, সাহায্যকারী সৈন্য-সামন্ত প্রতি—এমন কি, স্ব স্ব শরীর প্রতি কেহ লক্ষ্য করিবে না। আজ হাসানের শোক, হোসেনের শোক, এই তরবারিতে নিবারণ করিব। সে আগুন এই শাণিত অস্ত্রের সাহায্যে এজিদ-শোণিতে আজ কথঞ্চিৎ নিবারণ করিব। আজ কাফেরের দেহ-বিনির্গত শোণিতে লোহুর নদীর বহাইব,—মরুভূমে রক্তের প্রবাহ ছুটাইব। শত্রুর মনঃকষ্ট দিতে আজ কাহারও বাধা মানিব না—কোন কথা শুনিব না। ঐ জাহান্নামী কাফের মারওয়ানের মস্তক কাটিয়া একটি বর্শায় বিদ্ধ কর। পাপীর দেহ শতখণ্ডে খণ্ডিত কর। মস্তক ও খণ্ডিত দেহসকল বর্শাগ্রে বিদ্ধ করিয়া ঘোষণা করিতে করিতে অগ্রে অগ্রে যাও এবং মুখে মুখে বল, “এই সেই কাফের মারওয়ান! এই সেই মন্ত্রী মারওয়ান!! এই সেই এজিদের প্রিয় সখ মারওয়ান!!!”

 হানিফার মুখের কথা মুখে থাকিতে থাকিতেই মদিনাবাসী কয়েকজন নবীন যোদ্ধা, অসি ঘুরাইতে ঘুরাইতে ছুটিয়া আসিয়া, “এই সেই মারওয়ান! এই সেই মন্ত্রী মারওয়ান!! এই সেই এজিদের প্রিয়সখা মারওয়ান!!! এই সেই নরাধম পিশাচ!!!!” ইত্যাদি শত শত প্রকার সম্বোধন করিয়া, চক্ষুর নিমিষে মারওয়ানের দেহ—এক, দুই, তিন ইত্যাদি ক্রমে গণিয়া শত খণ্ডে খণ্ডিত করিলেন। মস্তক ও খণ্ডিত দেহসকল বর্শার অগ্রে বিদ্ধ করিতে ক্ষণকালও বিলম্ব হইল না।

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “ভ্রাতৃগণ! আজ হানিফা এই অস্ত্র ধরিল! পুনরায় বলিতেছি, ধর্ম্মত প্রতিজ্ঞা করিতেছি,—এজিদ-বধ না করিয়া এ অন্ত্র আর কোষে রাখিব না। ভ্রাতৃগণ! আমার অসহায় পরিজনদিগের কথা মনে করিও,—এই আমার প্রার্থনা। গাজী রহ মান উপযুক্ত সৈন্য লইয়া জয়নাল আবেদীন সহ আমাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতে থাকুন। যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, আর ফিরির না। আর শিবিরের আবশ্যক নাই।