পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৫
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

বিশ্রাম-উপযোগী দ্রব্যের প্রয়োজন নাই। জীবনরক্ষা হইলে আজই সুবিস্তৃত দামেস্ক-রাজ্য লাভ হইবে। জয়নালকে দামেস্ক-সিংহাসনে বসাইতে পারিলে বিশ্রাম-বিলাস সকলই পাইব। আর যদি জীবন শেষ হয়, তবে কোন দ্রব্যের আবশ্যক হইবে না। ভাঙ্গ শিবির, লুটাও জিনিষ।”

 এই কথা বলিয়া মোহাম্মদ হানিফা অশ্বারোহণ করিলেন। সকলে সমস্বরে ঈশ্বরের নাম সপ্তবার উচ্চারণ করিয়া ঘোরনাদে মহারাজ জয়নালের জয়-ঘোষণা করিয়া, দুই এক পদ অগ্রসর হইতে লাগিলেন। মারওয়ানের পণ্ডিতদেহ একশত বর্শায় বিদ্ধ হইয়া অর্থে অগ্রে চলিল। শিবিরের বাহির হইয়া পুনরায় ভীমনাদে ঈশ্বরের নাম করিয়া সকলে এজিদ-বধে যাত্রা করিলেন। সম্মুখে শত শত বর্শাধারী সমস্বরে বলিতে লাগিল, “এই সেই কাফের মারওয়ান! এই সেই মন্ত্রী মারওয়ান!! এই সেই এজিদের প্রিয়সখা মারওয়ান!!!” আর মুহূর্ত্তে মুহুর্ত্তে ঈশ্বরের নাম এবং নবীন রাজার জয়ধ্বনিতে দামেস্ক-প্রান্তর কম্পিত হইতে লাগিল।

 এজিদের মোহ-নিদ্রা ভাঙ্গিয়া গেল। তাঁহার মস্তক ঘুরিতেছে, সঙ্গে সঙ্গে মনের বেদনাও আছে।—শরীর অলস, স্ফূর্তিবিহীন, দুর্ব্বল। নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছে, শয্যা হইতে তিনি উঠিয়া বসিতে পারেন নাই। কিন্তু উপস্থিত ভীষণ শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেই এজিদ সেই আরক্তিম নয়নে পরিশুদ্ধ মুখে বিকৃত মস্তকে শয্যা হইতে চমকিয়া উঠিলেন, তাঁহার অন্তর কাঁপিতে লাগিল। মহা অস্থির হইয়া শিবিরদ্বার পর্য্যন্ত আসিয়া তিনি দেখিলেন যে, মহাসঙ্কটকাল উপস্থিত। কোথায় মারওয়ান? কোথায় অলীদ? এ দুঃসময়ে কাহারও সন্ধান নাই! ওমর ও অন্যান্য সেনাপতিগণ আসিয়া অভিবাদনপূর্ব্বক দণ্ডায়মান হইলেন। রাত্রের ঘটনার আভাস দিতে সমুদয় কথা এজিদের মনে হইল। বীরদর্পে তিনি বলিতে লাগিলেন, “ওমর! তুমিই আজ প্রধান সেনাপতি। চিন্তা কি? মারওয়ান গিয়াছে, অলীদ গিয়াছে, এজিদ আছে! চিন্তা কি? যাও যুদ্ধে! দাও বাধা—মার হানিফাকে! তাড়াও মুসলমান! ধর তরবারি! আমি এখনি আসিতেছি, আজ হানিফার যুদ্ধ-সাধ, জীবনের সাধ এখনি মিটাইতেছি।”