পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৩৬

 ওমর শিবিরের বাহিরে আসিয়া পূর্ব্ব হইতেও তুমুলবে বাজনা বাজাইতে আদেশ করিল। মনের উৎসাহে—আনন্দে সৈন্যগণ বিষম বিক্রমে দণ্ডায়মান হইল। এদিকে এজিদ স্বসাজে,—মণিময় বীরসাজে সজ্জিত হইয়া শিবিরের বাহির হইয়া বলিলেন, “সৈন্যগণ। মারওয়ানের জন্য দুঃখ নাই, অলীদের কথা তোমরা কেহ মনে করিও না। আমার সৈন্যাধ্যক্ষ মধ্যে বিস্তর অলীদ, বহু মারওয়ান এখনও জীবিত রহিয়াছে। কোন চিন্তা নাই। বীর-বিক্রমে আজ হানিফাকে আক্রমণ কর। আমিই আজ পৃষ্ঠপোষক। এজিদের সৈন্য-বিক্রম, হানিফার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাসান দেখিয়াছে,—কারবালা-প্রান্তরে হোসেন দেখিয়াছে, আর আমি আজ দামেস্ক প্রান্তরে হানিফাকে দেখাইব। মার হানিফা! মার বিধর্ম্মী! তাড়াও মুসলমান! উহারা বিষম বিক্রমে আসিতেছে, আমরাও মহাপরাক্রমে আক্রমণ করিব। হানিফার যুদ্ধের সাধ আজই মিটাইব। সমস্বরে দামেস্ক সিংহাসনের বিজয়-ঘোষণা করিতে করিতে ক্রমে ক্রমে অগ্রসর হও।”

 এজিদ মহাবীর। এজিদের সৈন্যগণও অশিক্ষিত নহে—প্রভুর সাহসসূচক বচনে উত্তেজিত হইয়া বীরদর্পে তাহারা পদবিক্ষেপ করিতে লাগিল। আজিকার যুদ্ধ চমৎকার! কোন দলে ব্যূহ নাই, শ্রেণীভেদ নাই—আত্মরক্ষার জন্যও কেহ দণ্ডায়মান হয় নাই। উভয় দলেরই অগ্রসর—উভয় দলেরই সম্মুখে গমনের আশা।

 এজিদ সৈন্যদলের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছেন এবং সুযোগ মত হানিফার সৈন্যদলের আগমন দেখিতেছেন—অগণিত সৈন্য, সর্ব্বাগ্রে বর্শাধারী। বিশেষ লক্ষ্য করিয়া তিনি দেখিলেন—মানব-শরীরের খণ্ডিত অংশসকল বর্শায় বিদ্ধ এবং শুনিলেন—বর্শাধারীগণের মুখে একই কথা, “এই সেই মারওয়ান! প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান!! এজিদের প্রিয়সখা মারওয়ান!!!” এজিদ সকলই বুঝিলেন, মনে মনে দুঃখিতও হইলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে সে দুঃখ-চিহ্ন কেহ দেখিতে পাইল না, তাঁহার হাবভাবেও কেহ বুঝিতে পারিল না। সদর্পে তিনি বলিলেন, “সৈন্যগণ! মারওয়ানের খণ্ডিতদেহ দেখিয়া কেহ ভীত হইও না, হাতে পাইয়া সকলেই সকল কার্য্য করিতে পারে। শীঘ্র শীঘ্র