পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৩৮

 দৈবাধীন ওত্‌বে অলীদ আর ওমরের যুদ্ধের কি চমৎকার দৃশ্য! এ দৃশ্য কে দেখিবে? ঈশ্বরের মহিমায় যাহার অণুমাত্র সন্দেহ আছে, সেই-ই দেখিবে। কাল- ভ্রাতৃভাব, আজ শত্রুভাব,—এ লীলার অন্ত মানুষে কি বুঝিবে? ওমর বলিল, “নিমকহারাম! নিশীথ সময়ে শিবির হইতে বাহির হইয়া শত্রুদলে মিশিলি? প্রভাত হইতে না হইতেই আশ্রয়দাতা, পালনকর্ত্তা, তোর চির উপকারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরিলি? ধিক্ তোর অস্ত্রে! ধিক্ তোর মুখে! নিমকহারাম। ধিক্ তোর বীরত্বে।”

 ওত্‌বে অলীদ বলিলেন, “ভ্রাতঃ ওমর! ক্রোধে অধীর হইয়া নীচত্ব প্রকাশ করিও না, যথার্থ তত্ত্ব না জানিয়া কটু বাক্য ব্যবহার করিও না। ছিঃ ছিঃ! তুমি না প্রবীণ—প্রাচীন? সময়-গুণে তোমার কি মতিভ্রম ঘটিল? ছিঃ ছিঃ ভ্রাতঃ! স্থির ভাবে কথা বল, কথায় অনিচ্ছা হয়, অস্ত্রের দ্বারা সদালাপ কর।”

 “তোর সঙ্গে কথা কি? তুই বিশ্বাসঘাতক! তুই নিমকহারাম। তুই বীরকুলের কুলাঙ্গার।”

 “দেখ ভাই ওমর। আমি বিশ্বাসঘাতক নহি, নিমকহারাম নহি, কুলাঙ্গারও নহি। মারওয়ানের সঙ্গে আমি বন্দী হইয়াছিলাম। পরাভব স্বীকারে আত্মসমর্পণ করিয়া সত্যধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছি। সেই একেশ্বরের জ্বলন্ত ভাব আমার হৃদয়ে নিহত হইয়াছে, চক্ষের উপরে ঘুরিতেছে। তাই বিধর্ম্মী মাত্রেই আমার শত্রু; দেখিলেই বধের ইচ্ছা হয়; কারণ, সেই-ই নরাকার পশু, যে নিরাকার ঈশ্বরকে সাকারে পূজা করে। আবার যাহার অধীনতা স্বীকার করিয়াছি, তাঁহার মিত্র—মিত্র, তাঁহার শত্রু—পরম শত্রু। আর কি বলিব? তোমাকে গালি দিব না। তোমার কার্য্য তুমি কর, আমার কার্য্য আমি করি।”

 দুই জনে কথা হইতেছে, এমন সময় এজিদ ওমরের নিকট দিয়া যাইতেই অলীদকে দেখিয়া অশ্ব-বল্গা ফিরাইলেন।

 ওমর বলিতে লাগিল, “বাদশাহ্-নামদার! দেখুন আপনার প্রধান সেনাপতির বীরত্ব দেখুন!”