পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৪২

পৃষ্ঠে আঘাত করিল, বর্শাফলক অলীদের পৃষ্ঠ ভেদ করিয়া তাঁহার বক্ষস্থল হইতে রক্তমুখে বহির্গত হইল। অলীদ ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে শহীদ হইলেন।

 ওমর আলী এজিদকে দেখিয়া একটু দূরে ছিলেন, অলীদের অবস্থা দর্শনে অসি সঞ্চালন করিয়া ভীমনাদে ওমরের দিকে আসিয়া প্রথমতঃ তিনি ওমরের অশ্বগ্রীবা লক্ষ্যে আঘাত করিতেই বাজীরাজ শিরশূন্য হইয়া মৃত্তিকায় পড়িয়া গেল। বাম পার্শ্বে ফিরিয়া দ্বিতীয় আঘাতে তিনি এজিদের অশ্বমস্তক মৃত্তিকায় লুটাইয়া দিলেন। পশ্চাৎ ফিরিয়া তিনি দেখিলেন যে, ওমর এখনও সুস্থির হইয়া দণ্ডায়মান হইতে পারে নাই। তৃতীয় আঘাতে ওমর আলী বৃদ্ধ ওমরকে ধরাশায়ী করিলেন।

 এজিদ ওমরের অবস্থা দেখিয়া তাড়াতাড়ি বল্লম-হস্তে ওমর আলীর দিকে ধাইয়া যাইতেই, ওমর আলী সরিয়া গিয়া বলিলেন, “এজিদ। কেন আসিতেছ? যাও, হানিফার অস্ত্রাঘাত সহ্য কর। ওমর আলী তোমার সৈন্য বিনাশ করিতে চলিল।”

 দেখিতে দেখিতে ওমর আলী এজিদের চক্ষু হইতে অদৃশ্য হইলেন। এদিকে সিংহবিক্রমে ঘোর নিনাদে শব্দ হইতেছে, “জয়! জয়নাল আবেদীনের জয়! জয় মদিনার সিংহাসনের জয়! জয় নব ভূপতির জয়।”

 এজিদ ব্যস্ততা-সহকারে চাহিতেই দেখিলেন যে, তাঁহার সৈন্যদল মধ্যে কোন দল পৃষ্ঠ দেখাইয়া মহাবেগে দৌড়াইতেছে, কোন দল রণে ভঙ্গ দিয়া দাঁড়াইয়া আছে। বিপক্ষ-দলের আঘাতে অজ্ঞান জড় পদার্থের ন্যায় এজিদসৈন্য নীরবে আত্মবিসর্জ্জন করিতেছে। আর রক্ষার উপায় নাই—কোথায় পতাকা, কোথায় বাদিএদল, কোথায় ধানুকী, কোথায় অশ্বারোহী, কোথায় অস্ত্র, কোথায় বেশভূষা—আপন আপন প্রাণ বাঁচানই এখন মূল কথা। এখন আর আশা নাই—এদিকে এজিদ-প্রহরী দ্বিতীয় অশ্বতরী যোগাইল। এজিদ অশ্বতরীতে চড়িয়া দেখিলেন: রাজশিবির লুণ্ঠিত হইয়াছে, বিপক্ষদল অন্য অন্য শিবিরও লুণ্ঠন করিয়া আগুন লাগাইয়া দিয়াছে। সৈন্যগণ প্রাণভয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াইয়া পলাইতেছে। মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী, আক্কেল