পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৩
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

আলী প্রভৃতি তাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইয়া অশ্বপৃষ্ঠ হইতে বর্শাঘাতে তাহাদিগকে ধরাশায়ী করিতেছেন,—তরবারির আঘাতে তাহাদের শির উড়াইয়া দিতেছেন। আবার জয়ধ্বনি, আবার সেই জন-রব! এজিদ সে দিকে চাহিতেই দেখিলেন: অগণিত সৈন্য,—সকলের হস্তেই উম্মুক্ত অসি। মাঝে মাঝে ঊর্দ্ধদণ্ডে অর্দ্ধচন্দ্র আর পূর্ণতারা-সংযুক্ত দীন মোহাম্মদী নিশান শুভ্র মেঘের আড়ালে উড়িতেছে; সকলেই জয়নাল আবেদীনের বিজয়-ঘোষণা প্রকাশ করিতে করিতে নগরাভিমুখে যাইতেছে। এজিদ কিছুই বুঝিতে পারিলেন না, কেবল মধ্যে মধ্যে জয়-ঘোষণায় জয়নালের নাম শুনিয়া মনে মনে সাব্যস্ত করিলেন যে, নিশ্চয়ই জয়নাল এই সৈন্য-প্রাচীরে বেষ্টিত হইয়া নগরে যাইতেছে—রাজপ্রাসাদে যাইতেছে। তিনি স্বগতঃ বলিলেন: এখন কোথা যাই, কি করি! হতাশ হইয়া চতুষ্পার্শ্বে দেখিতেই, তিনি দেখিলেন যে, সেই কালান্তক কাল, এজিদের মহাকাল দ্বিতীয় আজরাইল—মোহাম্মদ হানিফা, রঞ্জিত কৃপাণ হস্তে রক্তমাখা দেহে রক্ত আঁখি ঘুরাইতে ঘুরাইতে “কোথায় এজিদ?” “কৈ এজিদ?” বলিতে বলিতে আসিতেছেন। এজিদ প্রাণভয়ে অশ্বে কশাঘাত করিলেন। মোহাম্মদ হানিফাও এজিদের দ্রুতগতি অশ্বের দিকে দুল্‌দুল চালাইলেন।

উদ্ধার পর্ব্ব সমাপ্ত