পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৫
এজিদ বধ পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

ক্রমে ক্রমে বহির্গত হইতেছে। কাহারও অনুতাপানল আক্ষেপ ইন্ধনে পরিবর্দ্ধিত হইয়া সতেজ রসনা আশ্রয়ে ছুটিয়া ছুটিয়া বাহির হইতেছে। মনের কথা মন-ভারে মনে মনে চাপিয়া হৃদয়ের রক্ত সমধিক হা-হুতাশ জলে পরিণত করিতেছে, কাহারও প্রতি লোমকূপ হইতে সে হা-হুতাশকৃত জলের কথঞ্চিৎ অংশ ঘর্ম্মচ্ছলে বহির্গত হইয়া তাহাকে অবসাদে নির্জীবপ্রায় করিতেছে। কেহ গত কথা স্মরণ করিয়া, বন্দীখানাস্থিত কুঠারহস্তে দণ্ডায়মান মনুষ্যঘাতী জল্লাদের উচ্চ মঞ্চের উপরিভাগ প্রতি স্থিরনেত্রে দৃষ্টিপাত করিয়া মস্তিষ্কের মজ্জা পরিশুদ্ধ করিতেছে। বন্দীমাত্রেই যে ন্যায় ও যথার্থ বিচারে দণ্ডিত—তাহা নহে। ভ্রান্তি ভ্রম মানবেই সম্ভবে! ইহাও নিশ্চয়, নির্ভুল অন্তর জগতে নাই। ভ্রমশূন্য মজ্জাও মানুষের নাই। ইহার পর নিরপেক্ষ সদ্বিচারকের সংখ্যা অতি অল্প। কত বন্দী—ভ্রমে, পক্ষপাতিত্বে, অনুরোধে, বিভ্রাটে আজীবন ফাটকে আটক রহিয়াছে।

 পাঠক! এই ত আপনার সম্মুখে দামেস্ক-কারাগারের অবিকল চিত্র। সুবিচার, অবিচার, হিংসা-দ্বেষে কত বন্দী, কত স্থানে কত প্রকার শাস্তিভোগ করিতেছে। বন্দীখানার তুল্য কোন স্থানই জগতে নাই। প্রহরীদল মানবাকার হইলেও স্বভাব ও ব্যবহারে পশু হইতেও নীচ। তাহাদের শরীর যে, রক্ত-মাংস-হৃদয় সংঘোগে গঠিত, ইহা কিছুতেই বিশ্বাস হয় না। চতুষ্পার্শে প্রাচীরবেষ্টিত স্থানটুকুই তাহাদের রাজ্য। এ রাজ্যের অধীশ্বর তাহারা। প্রবল প্রতাপে আধিপত্য করার কল্যাণে রাক্ষসভাব, পশুভাব, অমানুষিক-ভাব আসিয়া তাহাদের মস্তকে নির্ভর করিয়াছে। দয়া, মায়া, অনুগ্রহ, স্নেহ, ভালবাসা তাহাদের অন্তর হইতে একেবারে সরিয়া পড়িয়াছে; মুখখানিও রসনা-সহকারে এমনই বিকট ভাব ধারণ করিয়াছে যে, কর্কশ, নীরস, অন্তর্ঘাতী, মর্ম্মপীড়িত নিদারুণ বাক-প্রয়োগে সর্ব্বদা তাহারা বন্দীদিগকে জর্জ্জরিত করিতে থাকে। তদুপরি যথা-অযথা যন্ত্রণা—পদাঘাত, দণ্ডাঘাত—বন্দীভাগ্যে কথায় কথায় হইতে থাকে। দামেস্ক নগরে এজিদের বন্দীগৃহ নরক হইতেও ভয়ানক। শাস্তির মাত্রাও সেই প্রকার। ক্রমে দেখিতে পাইবেন,—বিধির বিধানে এজিদ-অজ্ঞায়, মারওয়ানের মন্ত্রণায়, প্রভু