পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৪৬

হোসেন-পরিবার, জয়নাল আবেদীন প্রভৃতি সকলেই ঐ বন্দীখানায় বন্দী। কিন্তু ইঁহাদের প্রতি কোনরূপ শাস্তির বিধান নাই। পৃথক খণ্ডে,—ভিন্ন কক্ষে ইহাদের স্থান নির্দ্ধারিত হইয়াছে। দৈনিক আহারের ব্যবস্থা বন্দীগৃহের প্রধান অধ্যক্ষ-হস্তে। তিনি যে সময় বিবেচনা করেন, সেই সময় শুষ্ক রুটি এবং এক পাত্র জল, যাহা বরাদ্দ আছে, তাহাই তাঁহাদিকে দিতে অনুমতি করেন।অন্য অন্য বন্দীর ভাগ্যে তাহাও নাই।

 পাঠক, ঐ দেখুন! দামেস্ক-বন্দীগৃহে শাস্তির চিত্র দেখুন! অধিকক্ষণ দেখাইব না। কোন্ চক্ষু এই অমানুষিক ব্যাপার দেখিতে ইচ্ছা করে?— তবে মহারাজ এজিদের বিচারের চিত্র অনেক দেখিয়াছেন, বন্দী খানার চিত্রও কিছু দেখুন।

 ঐ দেখুন, জীবন্ত নরদেহ লৌহপিঞ্জরে আবদ্ধ হইয়া কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করিয়াছে। অত্যাচারে, অনাহারে, অনিয়মে শরীর—জীর্ণ, বর্ণবিবর্ণ, চক্ষু—কোটরে, জিহ্বা-তালু—শুষ্ক, কণ্ঠ—নিরস,—মুখাকৃতি —বিকৃত, শরীর-অন্তঃসারশূন্য অস্থিপুঞ্জের সমাবেশ! কাহারও হস্তপদে জিঞ্জির, আবার কাহারও বা হস্তপদ মৃত্তিকার সহিত জিঞ্জিরে আবদ্ধ। কোন কোন বন্দী মৃত্তিকা-শয্যায় শায়িত, অথচ তাহাদের হস্ত-পদ লৌহশৃঙ্খলে লৌহ-পেরেকে ভূতলে আবদ্ধ। কাহারও বক্ষঃস্থল পর্য্যন্ত ভূগর্ভে নিহিত, কাহারও বা গলদেশ পর্য্যন্ত মৃত্তিকায় প্রোথিত। ঐ দিকে দেখুন! নরাকার রাক্ষসগণ হাসিতে হাসিতে জীবন্ত জীবের অঙ্গ হইতে সুতীক্ষ ছুরিকা দ্বারা চর্ম্ম ছাড়াইতেছে, লবণ মাখাইতেছে, সাঁড়াশি দিয়া চক্ষু কেমন করিয়া টানিয়া বাহির করিতেছে। দেখুন, দেখুন,—লৌহশলাকা—উত্তপ্ত লৌহশলাকা—মানুষের হাতে পায়ে হাতুড়ীর আঘাত বসাইয়া মৃত্তিকার সহিত কি ভাবে আঁটিয়া দিতেছে! এ সময়ে তাহাদের প্রাণে কি বলিতেছে, তাহা কি ভাবা যায়, না সহজ জ্ঞানে বোঝা যায়? কাহারও বা হস্ত-পদ মৃত্তিকার সহিত লৌহ পেরেকে আবদ্ধ, বক্ষে পাষাণ চাপা, চক্ষু ঊর্দ্ধে, কোন দিকে দৃষ্টির ক্ষমতা নাই, দৃষ্টি কেবল অনন্ত আকাশে। আরও দেখুন, কাহারও পা দু’খানি কঠিনরূপে ঊর্দ্ধে বাঁধা, মস্তক নিম্নে, হস্তদ্বয় ঝুলিয়া